দৃষ্টিনন্দন প্লাস্টিক বোতলের বাড়ি, দেখতে ভিড়

0
83
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের অটোচালক আবদুল হাকিমের ‘বোতলবাড়ি’

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার খানপাড়া গ্রামে ইটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে গড়া হয়েছে এক দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। নানা রঙের ফেলে দেওয়া খালি বোতলে বালু ও সিমেন্ট ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে গাঁথুনি করা হয়েছে দেয়ালে। এরপর সবুজ টিনের চালা বসানো হয়েছে। তিন কক্ষবিশিষ্ট এই আধা পাকা বাড়ি এখন এলাকাজুড়ে ‘বোতলবাড়ি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বাড়িটি দেখতে আসছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পেশায় ব্যাটারিচালিত অটোচালক আবদুল হাকিম (৩২) এটি বানিয়েছেন।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পাকা সড়ক ঘেঁষে দৃষ্টিনন্দন ‘বোতলবাড়ি’। এই সড়কে যাতায়াতকারী লোকজন বাড়িটি দেখে দাঁড়ান। নানা কিছু জানতে চান
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পাকা সড়ক ঘেঁষে দৃষ্টিনন্দন ‘বোতলবাড়ি’। এই সড়কে যাতায়াতকারী লোকজন বাড়িটি দেখে দাঁড়ান। নানা কিছু জানতে চান

আবদুল হাকিম বলেন, ৩০ হাত দৈর্ঘ্যের বাড়িটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার প্লাস্টিকের বোতল। প্রতিটি বোতলের ধারণক্ষমতা ২৫০-৩০০ গ্রাম। খালি বোতল কিনতে হয়েছে কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা দরে। বালু ও সিমেন্ট কতটা লেগেছে, তা তিনি সঠিকভাবে জানাতে পারেননি। গত সাত মাসে কাজের প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখনো প্লাস্টার, জানালা, দরজা, ছাদ ও অন্যান্য কাজ বাকি। অসমাপ্ত অবস্থায় হাকিম পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন।

বাড়িটি বানাতে এখন পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ১১ লাখ টাকার বেশি। হাকিমের হিসাব মতে, একই আকারের একটি ইটের বাড়ি করতে ৪-৫ লাখ টাকা খরচ হতো।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা সড়ক ঘেঁষে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। এই সড়কে যাতায়াতকারী লোকজন বাড়িটি দেখে দাঁড়াচ্ছেন। ব্যস্ততার মধ্যেও একটু দাঁড়িয়ে বাড়িটি দেখছেন। বাড়ির লোকজনের কাছে নানা কিছু জানতে চাইছেন। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে বাড়ি দেখতে এসেছেন। তাঁরা বাড়ির সামনে সেলফি তুলছেন।

লক্ষ্মীপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমি বাড়িটি মাঝেমধ্যে দেখতে আসি। এটি পরিবেশবান্ধব। বোতল দিয়েও এমন সুন্দর বাড়ি করা যায়—হাকিমের বাড়ি না দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিন। সামর্থ্য হলে আমিও এ রকম বাড়ি বানাব।’

নানা রঙের ফেলে দেওয়া খালি বোতলে বালু ও সিমেন্ট ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে গাঁথুনি করা হয়েছে দেয়ালে
নানা রঙের ফেলে দেওয়া খালি বোতলে বালু ও সিমেন্ট ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে গাঁথুনি করা হয়েছে দেয়ালে

খালপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন অনেক লোক বাড়িটি দেখতে আসেন। এ কারণে এলাকাটি সব সময় মুখরিত থাকে। ঠাকুরগাঁও থেকে আসা স্কুলশিক্ষক রকিবুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে বাড়িটি দেখতে কৌতূহল হলো। এসে ভালো লাগছে।

হাকিম বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল ব্যতিক্রমী কিছু করার। ইউটিউবে বোতলের বাড়ি দেখে ভাবলাম, এমন কিছু করব। তাই ভাঙারির দোকান ও গ্রাম থেকে নানা রঙের খালি বোতল সংগ্রহ করি। এরপর রাজমিস্ত্রিদের দিয়ে কাজ শুরু করি। প্রথমে অনেকে আমাকে পাগল বলত। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর সবাই খুশি হয়ে গেল। প্রতিদিন লোকজন বাড়ি দেখতে আসছেন। আমারও ভালো লাগছে।’

এমন বাড়ি বানানোর বিষয়ে আবদুল হাকিমের স্ত্রী আনজুমান আরা বেগম তাঁর স্বামীকে সব সময় সমর্থন করেছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, লোকজন তাঁদের বাড়ি দেখতে আসেন। নানা কিছু জানতে চান, তাঁর ভালোই লাগে এসব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.