দুবাই থেকে ‘আরাভকে’ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া জটিল

পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন

0
159
রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ।
  • পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ইমরান খান খুনের মামলার আসামি রবিউল। মামুন খুন হন ২০১৮ সালের জুলাই মাসে।
  • দুবাইয়ে রবিউল ওরফে আরাভ আটক হয়েছেন এমন গুঞ্জন ছড়ালেও তা ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

    আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘দুবাইয়ের সঙ্গে আমাদের যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে, সে অনুযায়ী তিনি যদি সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হতেন, তাহলে বিষয়টা সহজ হতো, কিন্তু তিনি তো বন্দী নন। সে জন্য জটিলতা রয়েছে।’

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আরাভ খানের বিরুদ্ধে “রেড নোটিশ” জারি করতে ইন্টারপোলকে (আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা) চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং সেটা তারা গ্রহণ করেছে। এখন দেখা যাক কী হয়। তিনি আমাদের পাসপোর্ট দিয়ে দুবাই যাননি। এখানেও জটিলতা আছে। এখন এ ব্যাপারে ভারতকে অনুরোধ করতে হবে। তাদের (ভারত) আমরা চিঠি দেব।’

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থাকার অর্থ এই নয় যে এক দেশের আসামি অন্য দেশে ধরা পড়লে তাঁকে সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই নোটিশের মাধ্যমে কোনো দেশের অপরাধীর ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ এবং তথ্য সংগ্রহ করা হয়। রেড নোটিশ আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও নয়।

    রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। ১৫ মার্চ দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে জমকালো অনুষ্ঠানে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকানের উদ্বোধন করেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের অনেক তারকাকে হাজির করে আলোচনায় আসেন আরাভ।

    দুবাইয়ে থাকা রবিউল পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান খুনের মামলার আসামি। মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তাঁর আধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে ঢাকার বনানী থানায় খুনের মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পলাতক রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

    এদিকে দুবাইয়ে রবিউল আটক হয়েছেন এমন গুঞ্জন গতকাল ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গতকাল তাঁর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, দুবাইয়ে পালিয়ে থাকা রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান এখনো সেখানে আটক হননি।

    রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ করছেন কি না, জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা তাঁর বিষয়ে সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’

    কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আরাভকে দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নজরদারিতে রেখেছে।

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, আসামি রবিউলের ক্ষেত্রে ‘বহিঃসমর্পণ ব্যবস্থা গ্রহণ’-সংক্রান্ত একটি চিঠি গতকাল ইন্টারপোল ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মূলত এই চিঠির ভিত্তিতে রবিউলের বিষয়ে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

    এ চিঠির বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, ‘শুরু থেকে আমরা এখানকার রাষ্ট্রদূতের (সংযুক্ত আরব আমিরাত) সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ও কানাডীয় হাইকমিশনকে আরাভের ভিসা বাতিল করতে বলেছি।’

    গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশভুক্ত আসামিদের তালিকায় রবিউল ওরফে আরাভের নাম বা ছবি ছিল না।

    পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি সুমন সিকদার ওরফে মুসাকে ওমান থেকে ২০২২ সালের মে মাসে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। যদিও দেশটির সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি নেই।

    ওমান পুলিশ আসামিকে ধরে উড়োজাহাজে উঠিয়ে দিয়েছিল। এর আগে ২০১৫ সালে শিশু শেখ সামিউল আলম (রাজন) হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় ইন্টারপোলের সহায়তায় কামরুলকে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

    তবে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করলেও অনেক সময় আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। যেমন ২০১৯ সালের অক্টোবরে দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ। সে সময় তাঁকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে জামিন হয় তাঁর। পরে তিনি দুবাই থেকে যুক্তরাজ্যে চলে যান। রবিউলের মতো জিসানেরও ভারতীয় পাসপোর্ট ছিল।

    রবিউল ওরফে আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গতকাল বলেন, ‘আমাদের আগে বুঝতে হবে দুবাই সরকারের অ্যাটিটিউড (মনোভাব) কী। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফেরানো যেতে পারে। কথাবার্তা চলছে, দেখি কী হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.