বহুল আলোচিত আয়কর রিটার্ন দাখিলে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাহারসহ জাতীয় সংসদে গতকাল রোববার অর্থ বিল- ২০২৩ পাস হয়েছে। আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন গতকাল বেলা তিনটায় শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংশোধনী আনেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
দুই হাজার টাকা করের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের মাধ্যমে পাওয়া সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর দিয়ে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।’
গতকাল সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ বাজেট নিয়ে নানাবিধ আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে, যা বাজেট বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে। এবারের বাজেটে মূল দর্শন হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রেইন চাইল্ড সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। তাই আমরা বাজেটে প্রতিটি খাতে, প্রতিটি অংশে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনায় দেশের জনগণকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ করেছি। বিভিন্ন ভাতার হার বৃদ্ধি করেছি, আমরা দেশের সাড়ে চার কোটি মানুষকে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাঝে আনতে পেরেছি। প্রায় এক কোটি পরিবারকে বিনা মূল্যে বা স্বল্পমূল্যে আমরা খাদ্য বিতরণ করে যাচ্ছি।’
১ জুন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট উপস্থাপন প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রাক্কলন করা হয় ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। আর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ।
বিরোধী দলের আলোচনা-সমালোচনা
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম ইউপি চেয়ারম্যানদের বেতন বাড়ানো ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় উপবৃত্তি চালুর প্রস্তাব করেন। জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু কলম ও প্লাস্টিক ঝুড়ি, যেগুলো গরিব মানুষেরা ব্যবহার করেন, তার ওপর কর বাড়ানোর সমালোচনা করেন। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি কুঋণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শক্ত হাতে ধরার আহ্বান জানান।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, ‘গ্রামের মানুষ এখন কষ্টে আছে। দুই মণ ধান বিক্রি করেও একটা ইলিশ মাছ কেনা যাচ্ছে না। আর বাণিজ্যমন্ত্রী যে পণ্য নিয়ে কথা বলেন, পরের দিনই সেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত কি না, সেটা আমার প্রশ্ন।’ তিনি বলেন, রিসোর্ট, বাগানবাড়ি, ফাইভ স্টার হোটেল, গুলশান–বনানীর বাড়ি, হোটেলে আয়কর কর্মকর্তারা অভিযান কেন চালান না।
জাপার আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে তাদের আরও বেশি তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যাংক হঠাৎ করে ইসলামি শরিয়াহ হয়ে গেল কীভাবে। তাঁর প্রশ্ন, লাইসেন্স নেওয়ার সময় কি সবাই ইসলামের নামে নেয়? সুদের মধ্যে ইসলাম টেনে আনা কেন?
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের মাধ্যমে লুটেরাদের হাতে সব তুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষের পকেট কাটার সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটাকে অর্থ বিল না বলে কর বিল বলাই ভালো।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ২ থেকে ৫ শতাংশ টাকা দিয়ে খেলাপিদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।