দুই তরুণের স্বপ্নযাত্রা শুরু

0
9
স্টার হান্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ক্রেস্ট হাতে মিষ্টি ঘোষ ও সাকিব হোসাইন। ছবি: দীপ্ত টিভির সৌজন্যে

গ্র্যান্ড ফিনালের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন দীপ্ত টিভির প্রতিভা অন্বেষণের রিয়েলিটি শো ‘স্টার হান্ট’। তিন মাসের প্রতিযোগিতা শেষে গতকাল শুক্রবার রাতে ঘোষণা করা হয় সেরাদের নাম। এতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কিশোরগঞ্জের মিষ্টি ঘোষ ও বরিশালের সাকিব হোসাইন। বিজয়ীদের হাতে এদিন তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। এ ছাড়া দুই বছরের চুক্তিতে তাঁরা সুযোগ পাবেন বড় পর্দার সিনেমা, ওয়েব ফিল্ম, ওয়েব সিরিজ ও টেলিভিশন ধারাবাহিকে।

স্টার হান্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ক্রেস্ট হাতে মিষ্টি ঘোষ । ছবি: দীপ্ত টিভির সৌজন্যে
স্টার হান্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ক্রেস্ট হাতে মিষ্টি ঘোষ । ছবি: দীপ্ত টিভির সৌজন্যে

মিষ্টির গল্পটা সিনেমার মতোই
মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয়ে হাতেখড়ি মিষ্টির। সেটা ২০১৬ সালের ঘটনা। ঢাকায় এসে অভিনয়ের সঙ্গে নাচের তালিমও নিয়েছেন। স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি করছেন ঢাকার একটি ফ্যাশন হাউসের ডিজিটাল বিপণন বিভাগে। ১০টা-৫টার চাকরি করলেও ভেতরে ভেতরে সব সময় অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন লালন করে গেছেন। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এক বন্ধুর পরামর্শে নিবন্ধন করতে যান, কিন্তু ততক্ষণে সময় শেষ। শেষমেশ দীপ্ত টিভিতে যোগাযোগ করে অডিশনের সুযোগ পান। এরপর সেরা ৪০, ২০ ও ১৬ পেরিয়ে পৌঁছে যান সেরা ১০–এ। সেরা দশের একটি রাউন্ডে তুলনামূলক খারাপ পারফরম্যান্সে বাদ পড়েন। তবে বিচারকদের বিশেষ বিবেচনায় তাঁকে একটা সুযোগ দেওয়া হয়। সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগান মিষ্টি। বাদ পড়তে যাওয়ার অবস্থা থেকে চ্যাম্পিয়নের মুকুট এখন তাঁর মাথায়!

বিজয়ীর নাম যখন ঘোষণা করা হলো, মিষ্টির মাথার ভেতর কী চলছিল তখন? প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আশাই করিনি। সেরা দশে এক দিনের পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার কারণে বাদ পড়েছিলাম। বিচারকদের বিশেষ বিবেচনায় ফেরার পর আমার ওপর চাপ অনেক বেশি ছিল। কারণ, আমার ওপর বিশ্বাস রেখে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর সবাই ভালো পারফরম্যান্স করছিলেন, তাই চ্যাম্পিয়ন হতে পারব কি না, সংশয় ছিল। যখন আমার নাম ঘোষণা করা হয়, তখন বিস্মিত! আবেগাপ্লুত হয়ে যাই।’

স্টার হান্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ক্রেস্ট হাতে মিষ্টি ঘোষ ও সাকিব হোসাইন। ছবি: দীপ্ত টিভির সৌজন্যে
স্টার হান্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ক্রেস্ট হাতে মিষ্টি ঘোষ ও সাকিব হোসাইন। ছবি: দীপ্ত টিভির সৌজন্যে

গ্র্যান্ড ফিনালেতে সবার পরিবার থাকলেও উপস্থিত থাকতে পারেনি মিষ্টির পরিবার। তাঁর বাবা অসুস্থ হওয়ায় বাড়ি থেকে আসতে পারেননি কেউ। ঢাকার বন্ধুদেরও কেউ আসেননি। নাম ঘোষণার সময় পরিবারের কেউ না থাকায় বেশ আফসোস রয়ে গেল তাঁর। মিষ্টির কথায়, ‘খুশির এ মুহূর্তে কেউ ছিলেন না, সবাইকে অনেক মিস করেছি। হয়তো তাঁরা শারীরিকভাবে ছিলেন না। কিন্তু মানসিকভাবে ঠিকই আমার সঙ্গে ছিলেন। ভিডিও কলে বাসায় কথা হয়েছে, সবাই খুশি হয়েছে।’ তিন মাসের এ যাত্রায় আত্মবিশ্বাস ও মনোজগতে পরিবর্তন এসেছে মিষ্টির। তিনি মনে করেন, মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ভয়। ভয়কে জয় করতে পারলে সব সহজ হয়ে যায়। প্রতিযোগিতায় জয়ের পর বেশ কিছু নতুন কাজের প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। মিষ্টি জানান, তিনি অনুসরণ করেন মেহজাবীন চৌধুরীকে আর আদর্শ মানেন সাদিয়া ইসলাম মৌকে।

মোশাররফের ভক্ত সাকিব
বরিশালের সাকিব হোসাইন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ক্যামেরার পেছনেও কাজ করছেন। তাঁর নির্দেশিত কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও জায়গা পেয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে। ক্যামেরার সামনে কাজ করার আগ্রহ তেমন না জন্মালেও প্রতিযোগিতার ফেসবুক পোস্ট দেখে নিবন্ধন করে ফেলেন তিনি। প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে পৌঁছে যান সেরা দশে। চ্যাম্পিয়নের মুকুট না জিততে পারলেও সাকিব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে এখান থেকে ভালো কিছু নিয়েই ফিরবেন তিনি। ফাইনালে বাবার উপস্থিতি আবেগপ্রবণ করেছে সাকিবকে। তাঁর কথায়, ‘শুধু চ্যাম্পিয়ন হয়েছি বলেই দিনটি আমার জন্য বিশেষ নয়। এদিন বাবা উপস্থিত ছিলেন। স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো বিশেষ দিনে বাবাকে সামনে পাইনি। নাম ঘোষণার আগে যখন তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলাম, তখন খুব আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছিলাম।’
এ প্রতিযোগিতাকে জীবনের প্রথম সিঁড়ি ভেবে সামনে এগিয়ে যেতে চান সাকিব। শুধু স্টার ঘোষণায় আবদ্ধ না থেকে কাজের মাধ্যমে নিজেকে সত্যিকারের তারা হিসেবে তুলে ধরতে চান তিনি। সাকিব অনুসরণ করেন হৃতিক রোশনকে, দেশে প্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও মোশাররফ করিম। হলিউডে সাকিবের প্রিয় অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও টম হ্যাঙ্কস।

আরও যাঁরা পুরস্কার পেলেন
দীপ্ত স্টার হান্টে অন্য প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম রানার্স আপ হয়েছেন যশোরের ফারিহা রহমান ও বরিশালের শফিউল রাজ। দ্বিতীয় রানার্স আপ হয়েছেন সিলেটের সানজিদা চৌধুরী ও বরিশালের হাফিজ রহমান। গ্র্যান্ড ফিনালের জমকালো আয়োজনে ছিল সেরা ৬ প্রতিযোগীর নাচ, কমেডি স্কিট। মিউজিক ম্যাশআপ পরিবেশন করেন সন্ধি, সভ্যতা ও কর্নিয়া।

আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন তিন জুরি তারিক আনাম খান, শিহাব শাহীন ও রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। এ ছাড়া দীপ্ত টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান, পরিচালক কাজী জাহিন হাসান, দীপ্ত টিভির প্রধান নির্বাহী তাসনুভা আহমেদ, চলচিত্র নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নির্মাতা অনিমেষ আইচসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

বিজয়ীদের হাতে এদিন তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। দীপ্ত টিভির সৌজন্যে
বিজয়ীদের হাতে এদিন তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। দীপ্ত টিভির সৌজন্যে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.