দাবার বোর্ডে বাজিমাত করে আলোকিত মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান-মনন রেজা নীড়রা। অথচ বিদেশের মাটিতে দেশকে সাফল্য এনে দেওয়া এসব দাবাড়ুই দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। ঘরোয়া প্রতিযোগিতা নিয়মিত হয় না, বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলতে গেলে পৃষ্ঠপোষকতার সংকট। জোড়াতালি দিয়ে সম্ভাবনাময় এ খেলাতে নিজেদের মগ্ন রাখলেও আদতে দৈন্যদশা কাটেনি তাদের।
শুধু কী তাই, ফান্ড সংকটের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের কর্তারাও জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার প্রাইজমানি কমিয়ে এনেছেন। একসময় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন পেত ১ লাখ টাকা। বর্তমানে দেওয়া হয় ৪০ হাজার টাকা। প্রাইজমানিতে মেয়েদের সঙ্গে করা হচ্ছে বৈষম্য। অতীতে চ্যাম্পিয়ন ২৫ হাজার টাকা পেলেও পাঁচ হাজার কমে তা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজারে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেখানে প্রাইজমানি বাড়ার কথা, সেখানে বাংলাদেশের দাবাড়ুদের তা কমেছে। এ বিষয়ে জানতে অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. তৈয়বুর রহমান সুমনকে ফোন দিলেও ওপাশ থেকে সাড়া মেলেনি।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নেমে আসে স্থবিরতা। খেলাধুলায় প্রাণ ফেরানোর জন্য সম্প্রতি ৯টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাহী কমিটির সভা করে দাবা ফেডারেশন। সেখানে অ্যাসোসিয়েশন অব চেস প্লেয়ার্স নতুন কমিটির কাছে বেশ কিছু প্রস্তাবনাও দিয়েছে। সেখানে ছিলেন আন্তর্জাতিক মাস্টার ও বর্তমান জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মনন রেজা নীড়, আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান, নারী জাতীয় চ্যাম্পিয়ন নোশিন আঞ্জুমসহ আরও অনেকে। তাদের সবারই চাওয়া দেশে যেন নিয়মিত টুর্নামেন্ট হয়। ‘বাইরে যে টুর্নামেন্টগুলো হয়, সেগুলো দেশে হলে অনেক ভালো হতো। জিএম টুর্নামেন্ট বাংলাদেশেও করা সম্ভব। তাহলে অনেক খরচ বাঁচত’– গতকাল সমকালের সঙ্গে এমনটাই বলেছেন নীড়।
নোশিন আঞ্জুমেরও একই চাওয়া, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশে দুটি গ্র্যান্ডস্লাম হয়েছিল। এটা ঠিক দেশে এসব টুর্নামেন্ট করলে অনেক খরচ হয়। তবে আমাদের জন্য ভালো। বিদেশে গেলে যেমন বিমান ভাড়া, থাকা-খাওয়া খরচ লাগে, দেশে হলে আমাদের তা লাগত না। ফেডারেশনের খরচও বেঁচে যেত।’ এরপরই প্রাইজমানি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এ দাবাড়ু, ‘নতুন কমিটির কাছে আমার চাওয়া প্রাইজমানি বাড়ানো। বিশেষ করে নারীদের প্রাইজমানি অনেক কম।’
দাবা ফেডারেশনও আছে দেনায়। বাংলাদেশের কাছ থেকে ১৮ হাজারের মতো ইউরো পায় ফিদে। সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে নতুন কমিটিকে। তাই দাবাড়ুদের চাওয়াগুলো শুনে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।