বগুড়ায় দুই বৃদ্ধসহ তিনজনকে হাতকড়া পরিয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ফিরোজা পারভীন। হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘন করে সমালোচনার মুখে আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ইউএনও ফিরোজা পারভীন দাবি করেন, ‘বৃদ্ধ কৃষক এবং তাঁর ছেলেসহ তিনজনকে হাতকড়া পরিয়ে কোনো অন্যায় করা হয়নি। যা করেছি, ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক ক্ষমতাবলেই করেছি। সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির শঙ্কায় তিনজনকে আটক করে হাতকড়া পরিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে মানবিক কারণে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ইউএনও ফিরোজা পারভীন বলেন, ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সরকারি খাসজমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই জায়গা নিয়ে রহমতবালা এলাকার রেজাউল ইসলাম তিনটি মামলা করে হেরেছেন। মামলায় হেরে যাওয়ার পর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে; কিন্তু রেজাউল করিম এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে বুধবার সেখানে যাওয়ার পর রেজাউল করিম এবং তাঁর ভাই ও ছেলে মারমুখী আচরণ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এবং সরকারি কাজে বাধা প্রদান করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা বলে তিনজনকে হাতকড়া পরিয়ে আটক করা হয়। মানবিক কারণে পরে আইনজীবীর মাধ্যমে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও দাবি করেন, হাইকোর্ট থেকে তাঁরা একতরফা স্থিতাবস্থা এনেছেন। স্থিতাবস্থা স্থগিত চেয়ে আপিল করা হবে।
ইউএনওর হাতে আটক ওই ব্যক্তিরা হলেন বগুড়া সদরের লাহিড়িপাড়া ইউনিয়নের রহমতবালা গ্রামের রেজাউল ইসলাম (৭৩), তাঁর ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম (৬০) এবং ছেলে রিপু (৩৫)।
কৃষক রেজাউল করিম বলেন, রহমতবালা মৌজায় ১ দশমিক ৯৭ একর ব্যক্তিমালিকানা জমি খাস দেখিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি তাঁদের নিজ দখলে থাকলেও সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করায় উচ্চ আদালতে রিট করেন। ১৫ জুন হাইকোর্ট ওই জায়গার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। আইনজীবীর পরামর্শে হাইকোর্টের আদেশ সংবলিত সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। খবর পেয়ে ইউএনও ফিরোজা পারভীন গত বুধবার পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিয়ে সেখানে গেলে হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি তাঁকে দেখানো হয়। কিন্তু ইউএনও উত্তেজিত হয়ে তাঁদের বাবা-ছেলে-ভাইসহ তিনজনকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলেন। প্রথমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আধঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। এরপর শহরের বড়গোলা এলাকায় সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে আইনজীবীর মাধ্যমে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি মেলে।
রেজাউল করিম আরও বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি, ইউএনওর সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণও করা হয়নি।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে ইউএনওর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ ছুটির দিনে ইউএনও সংবাদ সম্মেলন করলেন।
ভুক্তভোগী কৃষকদের আইনজীবী সৈয়দ আসিফুর রহমান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে হাইকোর্টের আদেশের সাইনবোর্ড টাঙানো কোনো অন্যায় হয়নি। উপজেলা প্রশাসন হাইকোর্টের আদেশ না মানতে চাইলে নোটিশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপজেলা প্রশাসন ডাকতে পারতেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশের সাইনবোর্ড টাঙানোর অপরাধে কাউকে হাতকড়া পরানো শুধু বেআইনি নয়, হাইকোর্টকে অবমাননা। এ ঘটনা হাইকোর্টকে জানানো হবে।