আজ ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এবার ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে। আমাদের দেশে অবাধে তামাক সেবন চোখে পড়ে। সিগারেট, বিড়ি, হুঁকা, জর্দা, গুল, সাদা পাতা—বুঝে না বুঝে ব্যবহারের কারণে সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পরিবেশ ভয়ংকর ঝুঁকিতে পড়ছে।
তামাকের ব্যবহার ক্যানসার, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, যক্ষ্মা, চোখের কিছু রোগ, বাতসহ রোগ প্রতিরোধক্ষমতার দুর্বলতার জটিলতা বাড়ায়।
ক্ষতি
- তামাকের ব্যবহার মুখের স্বাভাবিক লালা নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এতে সুপ্ত জীবাণুরা সক্রিয় হয়ে দাঁত ক্ষয় ও দাঁতে শিরশির অনুভূতি, ব্যথা, মাড়ির রোগ, দাঁতের সঙ্গে মাড়ি ও চোয়ালের হাড়ের শক্ত বন্ধন বিনষ্ট করে দাঁতকে নড়িয়ে ফেলাসহ মুখের জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।
- রং বিবর্ণ হয়ে দাঁত ধূসর, কালো বা খয়েরি রং ধারণ করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মুখের দুর্গন্ধ।
- স্বাদ কমায়। ক্ষুধামান্দ্য থেকে অপুষ্টি, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে নানা অসুখবিসুখ দেখা দেয়।
- তামাকের ব্যবহার মুখসহ দেহের অন্যান্য স্থানে ক্যানসার তৈরিতে অন্যতম ভূমিকা রাখে। এটি চোয়ালের ভেতরের অংশ, জিব, মাড়ি বা তালুতে সাদা জাল বা পর্দার মতো লিউকোপ্লাকিয়া, লাল ক্ষতের মতো লাইকেন প্লানাস নামক ক্যানসার–পূর্ববর্তী ক্ষতসহ
বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যাঁরা রাতে মুখে তামাক নিয়ে ঘুমান, তাঁদের বড় ধরনের জটিলতার আশঙ্কা থাকে। - তামাক ব্যবহারকারীদের দাঁত তোলা, মাড়ি রোগের চিকিৎসা, অন্যান্য সার্জারি, ইমপ্ল্যান্টসহ চিকিৎসা–পরবর্তী নানা জটিলতা বাড়ার
আশঙ্কা থাকে।
করণীয়
তামাকের পক্ষে একটিও হিতকর তথ্য নেই। বিষয়টিকে মেনে নিয়ে নীরব ঘাতক এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এ জন্য কিছু পন্থা অবলম্বন করা যায়—
- প্রাথমিক পর্যায়ে গাজর, আদা, মিছরি, বাদাম বা চিনিমুক্ত চুইংগাম তামাকের আসক্তি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- তামাক সেবনের কথা মনে এলেই অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। যেমন সিঁড়ি দিয়ে ওঠা–নামা, ব্যায়াম, মেডিটেশন, গান শোনা, ইন্টারনেটে গঠনমূলক কিছু করা, প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো, প্রার্থনা করা।
- বর্তমানে অনেকে ই-সিগারেট ব্যবহার করছেন। তবে এটি যে স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ এমন কোনো তথ্য নেই। তাই এটিও এড়িয়ে চলতে হবে।
- তামাক সেবন নিরুৎসাহী করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।
- ডা. মো. আসাফুজ্জোহা, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা