তাই বলে জার্সি কেনার টাকাও ছিল না!

0
203
নারী ফুটবলারদের জার্সি কেনার টাকাও ছিল না

নারী দলকে অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমারে পাঠাতে না পারায় সমালোচিত হচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। অর্ধ কোটি টাকা ব্যবস্থা করতে পারেনি বলে সাবিনা খাতুনদের খেলতে পাঠাতে পারেনি বলে আক্ষেপ করেছিলেন ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। অথচ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে বাফুফে তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বাজেট দিয়েছিল। বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া, ক্রীড়াসামগ্রী থেকে শুরু করে পকেট মানি মিলিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন মোট ৯২ লাখ টাকার বাজেট পাঠিয়েছিল মন্ত্রণালয়ে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, সেই বাজেটের মধ্যে মোজা কেনা, জার্সি কেনাসহ ইমার্জেন্সি মানিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আর্থিক সংকটে মেয়েদের টুর্নামেন্টে খেলতে না পারার দায়টা বাফুফে চাপিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ওপর। বাফুফের দোষারোপকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে রোববারই পাল্টা তোপ দাগিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। সোমবারই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে পাওয়া যায়, বাফুফের দেওয়া বাজেটের পরিমাণ। ঢাকা থেকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের দূরত্ব খুব বেশি নয়। কিন্তু বাফুফে যাওয়া-আসা মিলিয়ে প্রতিজনে বিমান ভাড়া ধরেছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে।

খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা মিলিয়ে ৩১ জনের বিমান ভাড়া, ভিসা ফি এবং ইন্স্যুরেন্স ফি বাবদ মিলিয়ে বাজেট দিয়েছে ৪২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। অথচ বিমান ভাড়া প্রতিজনে ৮০ হাজার টাকার মধ্যেই হয়ে যাওয়ার কথা। এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এর পর মিয়ানমারে হোটেল ভাড়া বাবদ ১৩টি ডাবল ও ৫টি সিঙ্গেল রুমের জন্য ২৫ হাজার ডলার ধরেছে বাফুফে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হিসাবে ডলার মূল্য ধরা হয়েছে ১১৫ টাকা করে। তাতে আবাসন বাবদ খরচ দেখিয়েছে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

উয়েফা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে একটি গাড়ি উপহার দিয়েছে। সেই গাড়িতে করে মেয়েরা অনুশীলন থেকে শুরু করে ম্যাচ ভেন্যুতে যায়। নিজেদের গাড়ি থাকতেও বাফুফে ভবন টু বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে যাতায়াতের জন্য ২৫ হাজার টাকার বাজেট দিয়েছে। সব মিলিয়ে বিমান ভাড়া, আবাসন খাত ও যাতায়াত বাবদ যে বাজেট দিয়েছে ফুটবল ফেডারেশন, তাতে টাকার অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৭২ লাখ।

অথচ বাফুফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মেয়েদের মিয়ানমার সফরের জন্য ৫০ লাখ টাকা লাগত। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বাফুফের দেওয়া বাজেটের পরের অংশ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। ক্রীড়াসামগ্রী খাতের মধ্যে অনুশীলন জার্সি, ম্যাচ জার্সি, টি-শার্ট, বুট, গোলরকক্ষক গ্লাভস, থেরা ব্যান্ড, মোজা, ব্যাগ, বিবস, বল, পকেট মানি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। বিশেষ করে ৫০টি বল, ম্যাচ এবং প্র্যাকটিস জার্সি তো বাফুফের নিজেরই থাকার কথা। কারণ, এগুলো তো সব সময়ই লাগে। আর নারী ফুটবল দলের জন্য পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে ঢাকা ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান । ফুটবল ফেডারেশন চাইলে এসব বাদ দিয়ে বিমান ভাড়া, আবাসন খাতের বাজেট দিতে পারত।

মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে মেয়েদের জার্সির বাজেট দেওয়ার বিষয়কে অন্য কারণ হিসেবে দেখছেন ফুটবল-সংশ্লিষ্টরা। কারণ, একটা দলের জার্সি তো ফেডারেশন স্পন্সরদের কাছে থেকে নিতে পারে। তাই বলে কি জার্সি কেনার টাকাও ছিল না বাফুফের। যদিও বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ব্যাপারটিকে এভাবে দেখতে চান না। ‘আমরা একটা বাজেট দিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু আলোচনার আর সুযোগই হয়নি। সাধারণত টুর্নামেন্টে কোনো স্পন্সর পেলে তাদের টাকায় আর না পেলে নিজেদের ফান্ড থেকে মেয়েদের জার্সি তৈরি করি।’

টাকার অভাবে যে বাছাই খেলতে মেয়েদের পাঠায়নি বাফুফে, সেখানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে প্রতিবেশী দেশ ভারত কোয়ালিফাই করেছে। অথচ গত বছরের সেপ্টেম্বরে নেপালে শিরোপা জেতার পথে এই ভারতকে হারিয়েছিল কৃষ্ণা-সানজিদারা।

সাখাওয়াত হোসেন জয়

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.