তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব দল একমত: অধ্যাপক আলী রীয়াজ

0
17
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ–সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ

বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিন্ন মত পোষণ করে এবং এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঐকমত্য আছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

আজ বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের অষ্টম দিনের আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

আজকের বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন, কাঠামো এবং এই সরকার কত দিন থাকবে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আলোচনায় বিভিন্ন রকম মতামত এসেছে। এ বিষয়ে দুটি সুপারিশ ছিল, সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে ছিল ৯০ দিনের, আর নির্বাচন কমিশন সংস্কারবিষয়ক কমিশন সুপারিশ করেছিল ১২০ দিনের।

সুপারিশকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই দুই সময় এবং এই সরকারের পরিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কাছাকাছি এসেছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও আজ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আলোচনায় এ বিষয়েও উল্লেখযোগ্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে আশু এবং দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আশু ব্যবস্থা হিসেবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষায়িত কমিটি গঠন। যদি কমিটি গঠন হয়ে থাকে, তাহলে পরিবর্তন সাধন করে সেই কমিটি দ্বারা সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা। বর্তমান যে কমিটি করা, সেটা যাতে পরিবর্তন করে রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের প্রতিফলন ঘটে। তাঁরা এ বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন।

আর দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানে যে ঐকমত্য হয়েছে, তা হলো প্রতি আদমশুমারি বা অনধিক ১০ বছর পরে সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯–এর দফা ১–এর (গ) এর শেষে উল্লেখিত ‘এবং’ শব্দটির পর ‘আইনের দ্বারা নির্ধারিত একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠনের বিধান’ যুক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইন ২০২১, যা ২০২৫ সালে সংশোধিত হয়েছে, তার ৮(৩) সঙ্গে যুক্ত করে ওই কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হবে।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা সংবিধানে কিছু বিষয় যুক্ত করার কথা বলেছি। তার পাশাপাশি সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আইনের মধ্য দিয়ে কমিটির পরিধি ও কার্যপরিধি গঠন নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন যেন থাকে, তা বলেছি। দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সমাধানের জন্য এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।’

খুব দ্রুত এসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা থাকলে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জুলাই সনদ তৈরি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আলোচনার শুরুতে জুলাই শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজকের আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.