টুটুলের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তানিয়া বললেন, সন্তানের পিতাকে তো কখনোই ছোট করব না

0
335
তানিয়া আহমেদ

অভিনয়শিল্পী তানিয়া আহমেদ ও সংগীতশিল্পী এস আই টুটুলের পারিবারিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁরা দুজন এখন নিজেদের মতো করেই আলাদা থাকছেন। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। এর মধ্যে বেশ কিছুদিন আগে বিচ্ছেদ হওয়া এই জুটি আলোচনার বিষয়বস্তু। দুজনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানান চর্চা হচ্ছে। এসবের মধ্যে সম্প্রতি তানিয়া আহমেদ কথা বললেন প্রথম আলোর সঙ্গে। জানা যায়, তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায়। কথা প্রসঙ্গে উঠে এল অনেক কিছু। জানা গেল, শিগগিরই নতুন ছবির কাজও শুরু করছেন। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য আলোচনার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।

তানিয়া আহমেদ
তানিয়া আহমেদছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

শুনলাম নতুন ছবিতে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন…

দুই দিন পরপর পরিচালকের সঙ্গে কথা হচ্ছে। সাইন করতে চেয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছি। সাধারণত আমাদের এখানে দেখা যায়, হিরো-হিরোইননির্ভর গল্প। এটা প্যারালাল দুই নারীর গল্প। তারপর একটা রেখায় গিয়ে মিলেছে। এটা আমার কাছে সবচেয়ে অসাধারণ লেগেছে। আমার কাছে মনে হয়, আমার এই বয়সে এসে আমি তো হিরোইন হিসেবে অভিনয় করব না। আমি এ রকম কিছু একটা করতে চাই, যেটার মাধ্যমে আমার ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে পারব। আমি রায়হান খানের ছবিতেও যেটা করেছি, ওখানেও হিরো-হিরোইন আছে ঠিকই; কিন্তু অন্য যে চরিত্র আছে, একটা আমি করেছি, অন্যটা মিশা সওদাগর ভাই। আমাদের এই দুটি চরিত্র বাদ দিলে ছবির গল্পটা দাঁড়াবে না। আমি এ ধরনের কিছু একটা করতে চাই।

‘এক্সকিউজ মি’ বা ‘পায়েল’ ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

আমার অংশের কাজ পুরো শেষ। এরপর কিছু প্যাচওয়ার্ক হয়তো রয়েছে। এই ছবিতে আমি যৌনপল্লির মাসি। এ ধরনের চরিত্র আমি কখনোই করিনি। এ ধরনের চরিত্র করতে পারাটা একধরনের চ্যালেঞ্জ। ফুটিয়ে তোলা, অভিব্যক্তি, যারা প্রতিটা কাজ করেছে—ক্যামেরাম্যান থেকে শুরু সবাই দেখা যাচ্ছে শিলা মাসির চরিত্রের গভীরে ঢুকে যাচ্ছে। সবাই বলছে, এত ন্যাচারাল, মনে হচ্ছে আপনি চরিত্রটা কাছ থেকে দেখেছেন। আসলে বিষয়টা মোটেও এমন নয়। আমি আগেও দেখেছি, হুমায়ূন (আহমেদ) স্যারের ওখানে যখন কাজগুলো করেছি, আমার সিকোয়েন্স দেখে, সেটের সবাই জানে যে অভিনয় করেছি। কিন্তু কান্নার ওসব দৃশ্য শেষ পর্যন্ত আমাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পর্যন্ত এনে দিয়েছিল।

 তানিয়া আহমেদ
তানিয়া আহমেদছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

এ চ্যালেঞ্জ উতরানোর জন্য আপনার কী কী প্রস্তুতি ছিল?

বহু আগে স্মিতা পাতিলের একটা সিনেমা দেখেছিলাম। ‘মান্ডি’ নামের ছবিটি পতিতাপল্লি ঘিরে। তখন খুব ছোট ছিলাম। স্মিতা পাতিলকে পাগলের মতো পছন্দ করি। স্মিতা পাতিলের অভিনয় মনে দাগ কেটেছিল। বসার স্টাইল। ওই প্যাটার্নগুলো মাথার মধ্যে গেঁথে ছিল। আমাকে যখন এই চরিত্রটা বোঝাচ্ছিল, তখন ভেবেছিলাম, আমি যদি ও রকম কিছু একটা আমার মতো করে করতে পারি। আমার পরিচালক রায়হান বলেছিল, আমি ও রকম চাই না। আবার সোসাইটি গার্লদের মতো কিছু চাই না। পুরো গল্পটা স্বপ্নের মতো। ওই চরিত্রটা আমার মতো করে সাজিয়ে নিয়ে আমার মতো করেছি। স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝামাঝি জায়গায় পরিচালক যেতে চেয়েছে। তুমি যেভাবে ফিল করছ, সেটাই করো। স্বাধীনতা ছিল। আমিও চমৎকারভাবে কাজ করছি।

যুক্তরাষ্ট্রে এখন সময় কাটছে কীভাবে?

এর মধ্যে চার-পাঁচটা শো করলাম। নাটকের শুটিংও করলাম। এসেই চলে যাই অ্যারিজোনা, এরপর লস অ্যাঞ্জেলেস। অস্টিন, এডিনবার্গ, ডালাস থেকে ফ্লোরিডায় ছেলের কাছে গিয়েছিলাম।

 তানিয়া আহমেদ
তানিয়া আহমেদছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

আপনি ও টুটুল ভাইকে নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে নানা কথা শোনা যাচ্ছে…

আমি শুধু একটা কথাই বলতে চেয়েছিলাম, আমি কোনো কমপ্লেইন করিনি। মানুষের সম্পর্কটাকে ব্যাখ্যা করেছি শুধু। মানুষের মধ্যকার সম্পর্ককে খারাপ করার দরকারও নেই। আমি কোনো দিন নেগেটিভ কিছু বলিনি। বলবও না। সম্পর্ক তার সঙ্গে নাই–বা থাকতে পারে, তার মানে আমি তো তাকে অশ্রদ্ধা করতে পারি না। অবশ্যই করব না কোনো দিন। তার ভিন্ন দিকে যাওয়া বা কোনো কিছু করাটা, এটা তো প্রত্যেকটা মানুষের অধিকার। আমি যদি এখন চাই, ভিন্নভাবে কিছু চিন্তা করতে পারব না? এভরি সিঙ্গেল পারসন হ্যাজ দেয়ার ওন রাইটস। উই আর নট ইচ আদার উইথ অ্যানিমোর। তাহলে এই মানুষটাকে আমি কেন দোষ দেব! মানুষ আমাকে অনেক কিছু বলতে চায়, কিন্তু আমি ওসব শুনতেই চাই না। কারণ, প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা সত্তা। তাই আমি প্রত্যাশা করব না, আমি যা চাইব, যেভাবে চাইব—সব সেভাবে হবে। আমি কিন্তু বারবার বলেছি, আমি যে মানুষটাকে ভালোবেসেছিলাম, হয়তোবা সে জায়গার ছন্দপতন হয়েছে। টুটুলকে কখনো দোষারোপ করিনি। টুটুলের অভিযোগ ছিল, আমি কেন এ কথা বলেছি যে টুটুলই আমাকে ছেড়ে গেছে। আমি কোনো দিন এ ধরনের কথা বলিনি। টুটুল চেষ্টা করেছে। আমিও চেষ্টা করেছি। আমরা দুজন করেছি। কিন্তু চেষ্টা করে হয়তো একটা পর্যায়ে যাওয়া যায়নি। সে কারণে দুজন মানুষ আলাদা থাকা ভালো তো। একটা জায়গায় থেকে মারামারি, ঝগড়াঝাঁটি ও পিটাপিটি করে থাকার চেয়ে আলাদা থাকাই তো ভালো।

ভালো লাগা, ভালোবাসাসহ আরও নানা কারণে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন একসঙ্গে পথচলার। এখন আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটারও নিশ্চয় নানা কারণ আছে?

এই যে আমি এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছি, আমার ছেলে ফ্লোরিডায় আছে তার বাবার কাছে। টুটুলের সঙ্গে ছেলে কানাডায় যাচ্ছে। ঘোরাঘুরি করছে। বাবা-ছেলে থাকবেই, ঘুরবেই। আমি কিন্তু কোনো দিন বাচ্চাদের সঙ্গে বাবার কথা বলা ও ঘোরাঘুরি করা নিয়ে কিছু বলিনি। সব সময় ছেলেদের বলি, বাবার খবর নিয়েছ? বাবার সঙ্গে কথা বলেছ? আমার সঙ্গে ওর সম্পর্ক আর বাচ্চাদের সঙ্গে ওর সম্পর্ক ভিন্ন জিনিস। আমি স্টুপিডের মতো কেন এমনটা বলব।

তানিয়া আহমেদ
তানিয়া আহমেদ, ছবি: ফেসবুক থেকে

 

দূরত্ব তৈরির কারণটা আসলে কী ছিল?

দূরত্ব বা বদলে যাওয়াটা সব মানুষের ক্ষেত্রেই হয়। সম্পর্কের ক্ষেত্রের পরিবর্তনটা কেউ হয়তো স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে। কেউ হয়তো নিচ্ছে না। অনেক মানুষ হয়তো রাগ, ক্ষোভ, অভিমান, সমস্যা—সব উতরে গিয়ে টিকে আছে। আমাদের মা-বাবা ও পূর্বপুরুষদের দেখেছি, তারা বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিয়েছে। ওই সময়ের প্রেক্ষাপট আলাদা ছিল। কিন্তু এখন বিষয়টা আমি হয়তো পারিনি। আমি পারিনি বলেই যে আমি খারাপ মানুষ, তা নয় কিন্তু। কিছু মানুষ মেনে নিয়ে চলতে পারে। কিছু মানুষ হয়তো পারে না।

ভালোই তো চলছিল, আপনাদের সম্পর্ক থেকে সরে আসার প্রধান কারণ কী ছিল? কবে থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন আলাদা থাকবেন?

সম্পর্ক থেকে সরে আসার প্রধান বা প্রাথমিক কী কারণ, এটা কোনোভাবেই বলতে চাই না। এটা আসলে আমার আর টুটুলের বিষয়। এটা মানুষের সঙ্গে শেয়ার করার কিছু নেই। দিজ আর ভেরি ভেরি প্রাইভেট থিংস। বিষয়টা কারও সঙ্গে শেয়ার করতে একেবারে নারাজ। কী কারণে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে বলার মতো জায়গা আমার নেই। টুটুল যদি কখনো বলতে চায়, বলতে পারে।

বলার জন্য এখনকার সময়টাকে কেন বেছে নিলেন?

কথা প্রসঙ্গে কথা এসেছে। মোটেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না। গল্পচ্ছলে কথাগুলো বলা। সিনেমার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এসব কথা উঠে এসেছে। আমি এমন কিছু বলিনি যে অপমানজনক কিছু বলেছি। ইট ওয়াজ নেভার ইনটেনটেড টু সে সামথিং লাইক দিজ। গল্পচারিতায় মানুষ অনেক সময় আবেগপ্রবণ হয়। আমি কাউকে ছোট করিনি, কোনো দিন করতে চাইও না। আমি সন্তানের পিতাকে তো কখনোই ছোট করব না। এটা কখনোই হতে পারে না। আমার সন্তানদের সঙ্গে সে ভালো থাকুক।

আপনার সন্তানের বাবা নিয়ে কিছু বলার আছে?

আমি শুধু এটুকু বলব, সে ভালো থাকুক। নিরাপদে থাকুক। যেভাবে আছে, জীবনটা কাটাতে চায়, কাটাক। তার জীবনে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা যা কিছু করেছে, সে কিন্তু নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করেনি। অনেক মানুষ অনেক কথা বলেন। টুটুলকে নিয়েও ফালতু কথা বলেছেন। আমি কিন্তু তাঁদের স্টপ হতে বলেছি। আমি তাঁদের বলেছি, আপনাদের কারও রাইট নেই এটা নিয়ে কথা বলার। কারণ, মানুষটা তো ভুল কোনো কিছু করেনি। তার জীবনে বাঁচার ইচ্ছা আছে। নো বডি ক্যান সে অ্যানিথিং অ্যাবাউট ইট। এটা নিয়ে বলা উচিত নয়, আমি কিন্তু সেভাবেই বলেছি।

তানিয়া আহমেদ
তানিয়া আহমেদছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

এখন জীবন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

কাজ করছি। কাজ বেড়েছে। দেশের বাইরে শো অনেক বছর পর করছি। তিন-চার মাস আগে স্টেজ পারফরম্যান্স করে গেলাম। ‘দুই দুগুণে চার’ একটা প্রযোজনা। আমরা খুব সুন্দর সময় কাটাচ্ছি। সুন্দরভাবে কাজের মধ্যে আছি। যেহেতু ইউএসএতে আমার সন্তানেরা আছে, এখানে কেন্দ্র করে কিছু বিজনেস করার ইচ্ছা আছে। অনেকেই জানেন, আমি ফ্যাশন ও স্টাইলিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি, সেসব আবার প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছি। আটলান্টায় আরেক কাজিন আছে, তার সঙ্গে এসব শুরু করেছি। আমার এখনকার স্বপ্নগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারি, সেটা নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও আমাকে হেল্প করছে। আমার সন্তানেরা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তারা আমাকে সব সময় সুখী দেখতে চায়। এটাও ঠিক, আমি এখন সিঙ্গেল মানুষ। আমার জীবনে যদি কিছু ঘটে, সেটা তো দেখাই যাবে। আমার জীবনে যদি নতুন মানুষের আবির্ভাব ঘটে, যদি কোনো বন্ধুও হয়, লজ্জিত হওয়ার তো কিছু নেই। আমার বন্ধু আমার সন্তানেরা। ওদের সঙ্গে সব বিষয়ে আলাপ করি। আমার সন্তানেরা হচ্ছে লাইক মাই বেস্টফ্রেন্ড অ্যান্ড গিফট দ্যাট ওয়ান ক্যান হ্যাভ। একটা মায়ের জন্য এর চেয়ে বড় পাওনা আর কিছু হয় না। আলহামদুলিল্লাহ, আমার তিনটা ছেলে খুব ভালোভাবে মানুষ হচ্ছে।

আপনার সন্তানদের খবর বলুন…

বড় ছেলের বয়স ৩৪ বছর। এখন ব্যবসা করছে। মেজটা ফ্লোরিডায় আছে, বয়স ২৩ বছর। এখানকার একটি প্রতিষ্ঠানে সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছে। ছোটজন ক্লাস সেভেনে পড়ে, বাংলাদেশে থাকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.