জীবন বাঁচাতে ৯ ঘণ্টা মেঘনা নদীতে ভেসে ছিলেন জোহরা

0
122
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে মেঘনা নদীতে লঞ্চ থেকে পড়ে যাওয়া নারীকে ৯ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার করা হয়, ছবি: সংগৃহীত

চলন্ত লঞ্চ থেকে পড়ে গিয়ে টানা ৯ ঘণ্টা মেঘনা নদীতে ভেসে ছিলেন গৃহবধূ জোহরা বেগম (৩৮)। জীবন বাঁচাতে রাতের আঁধারে অদম্য প্রাণশক্তি দিয়ে স্রোতের সঙ্গে টিকে ছিলেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ঠান্ডাবাজার এলাকায় মেঘনা নদী থেকে ওই গৃহবধূকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

ঢাকায় যাওয়ার পথে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঠান্ডাবাজার এলাকায় মেঘনা নদীতে পড়ে যান ওই নারী। আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন জেলেরা। পরে কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেন। লঞ্চ থেকে পড়ে ওই নারীর বাঁ পা ভেঙে গেছে। তাঁকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কোস্টগার্ড ও পুলিশ জানায়, জোহরা বেগম শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের পশ্চিম বিষকাটালি গ্রামের জহিরুল ইসলামের স্ত্রী। স্বামী-সন্তানের সঙ্গে তিনি নারায়ণগঞ্জে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করে বুধবার রাতে ঈগল-৩ লঞ্চযোগে তিনি ঢাকায় যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁরা মাইঝাগা ঘাট থেকে লঞ্চে ওঠেন। সাড়ে ১০টার দিকে লঞ্চটি ঠান্ডাবাজার এলাকায় পৌঁছালে অসাবধানতাবশত তিনি লঞ্চের দ্বিতীয় তলা থেকে নদীতে পড়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজির পর স্বজনেরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে দুর্ঘটনার তথ্য জানান। পরে রাতে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা ওই গৃহবধূকে উদ্ধারে অভিযান চালান।

স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা জানান, লঞ্চ থেকে পড়ার পর জোহরা নদীতে ভাসতে থাকেন। সারা রাত তিনি নদীতে ভেসে ছিলেন। স্রোতে তিনি এক কিলোমিটার ভাটিতে ঠান্ডাবাজারের কাছাকাছি চলে আসেন। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে একটি নৌকার জেলেরা ওই নারীকে ভাসতে দেখে তাঁকে টেনে নৌকায় তোলেন। খবর পেয়ে কোস্টগার্ড তাঁকে উদ্ধার করে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জোহরা বেগম বলেন, ‘নদীতে পড়ে যাওয়ার পর তলিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার একটাই চিন্তা ছিল, বাঁচতে হবে। বাঁচার ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ভেসেছিলাম। চেষ্টা করছিলাম তীরের দিকে যাওয়ার। রাত থাকায় কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু ভেসে ছিলাম। লঞ্চ থেকে পড়ে যাওয়ার সময় পায়ে আঘাত পেয়েছিলাম। সেই আঘাতের প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। এরপর বাঁচার জন্য নদীতে ভেসেছিলাম।’

গোসাইরহাটের বিষকাটালী এলাকার ইউসুফ মালত বলেন, জোহরার লঞ্চ থেকে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে রাতে তাঁরা ট্রলার নিয়ে নদীতে খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু তাঁকে পাননি। সকালে জেলেরা তাঁকে ভাসতে থাকতে দেখে উদ্ধার করেন। মেঘনার তীরের মেয়ে হওয়ায় জোহরা দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা নদীতে ভেসে থাকতে পেরেছেন বলে তিনি মনে করেন।

জোহরের স্বামী জহিরুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজের পর খোঁজাখুঁজি করে যখন তাঁকে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন হয়তো জীবিত পাবেন না। আল্লাহর রহমতে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে ভেঙে গেছে। সন্ধ্যায় তাঁর পায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

গোসাইরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন হোসেন বলেন, রাতের আঁধারে গভীর খরাস্রোত নদীতে পড়ে একজন নারীর বেঁচে থাকার কথা না। অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.