গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০ ও ২১ মে সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে তলব নোটিশে। দুদকের এক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুদক ডেকেছে। সমস্যা নেই, আমি যাব। আমার জবাব দেব।
জাহাঙ্গীর আলম মেয়র ছিলেন প্রায় চার বছর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় হারান দলীয় পদ। এক পর্যায়ে নগর পিতার পদও যায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদকের। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। মিলছে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য! এরপর তথ্য পাওয়া যায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের।
পছন্দের ১০ ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই বানিয়েছেন ভুয়া ভাউচার, তুলেছেন বরাদ্দের পুরো অর্থ। এভাবে তাঁর মেয়াদে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি সংস্থাটির অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধান নথি থেকে জানা গেছে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ২০১৮-২১ মেয়াদে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ খরচে দুর্নীতি হয়নি বলে তথ্য-উপাত্ত বলছে। অন্যদিকে সরকারি অর্থায়নের কাজ না করে ভুয়া কাগজপত্রে বাস্তবায়ন দেখিয়ে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান বলছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে ১ হাজার ২০০ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম মেয়র থাকা অবস্থায় রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার, কালভার্ট তৈরি, আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমার মাঠ সংস্কার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নানা কাজ দেওয়া হতো পছন্দের ১০ প্রতিষ্ঠানকে। তারা তাঁকে বিশেষ সুবিধা দিত। তিনি তাদের ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতেন না। ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ঠিকাদারি কাজে মেয়রের অর্থ আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। এসব ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে পিডি থাকেন, সংশ্লিষ্ট আরও কর্মকর্তাও থাকেন, তাঁরা বিষয়টি দেখভাল করেন। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দুদকে দেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তি নেই। এসব মিথ্যা অভিযোগ। তিনি দাবি করেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ঠিকাদারের মাধ্যমে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তাবায়ন হয়নি। তাঁর মেয়াদে বৃহৎ অঙ্কের সরকারি অর্থায়নে উন্নয়ন কাজও হয়নি।