জার্মানির ২১ তম সাধারণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল রোববার। স্থানীয় সময় সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যা ছয়টায়। নির্বাচন শেষ হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পরই বুথফেরত জরিপের ফল পাওয়া যায়। সন্ধ্যা ছয়টায় নির্বাচন শেষ হবার পরপরই প্রাথমিক নির্বাচন সমীক্ষাতে দেখা গেছে নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মের্ৎসের দল ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন জয়ী হয়েছে। তবে ডানপন্থীদেরও উত্থান ঘটেছে। নির্বাচনে রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন দল ২৯ শতাংশ, (সিডিইউ ও সিএসইউ), কট্টরবাদী জার্মানির জন্য বিকল্প দল (এএফডি) ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ, সামাজিক গণতান্ত্রিক দল (এসপিডি) ১৬ শতাংশে এগিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশবাদী সবুজ দল ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বাম দল দ্যা লিঙ্কে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে এগিয়ে রয়েছে।
রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা জানাচ্ছেন, এক্ষেত্রে ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন, সামাজিক গণতান্ত্রিক দল এবং পরিবেশবাদী সবুজ দল শক্তিশালী জোট করে সরকার গঠন করতে পারে।
গত নভেম্বরে জার্মানির তিনদলীয় জোট সরকার ভেঙে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট সময়ের ছয় মাস আগেই জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল।
মধ্য ইউরোপের বড় দেশ জার্মানির এই নির্বাচনকে এ মুহূর্তে ইউরোপে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, ইউরোপে কট্টর জাতীয়তাবাদীদের উত্থান ঘটছে। জার্মানিতে কট্টরপন্থীরা আলোচনায় ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা ইউরোপীয় রাজনীতি নিয়ে নানা কথাবার্তা বলছেন, আস্ফালন করছেন। ফলে জার্মানিতে কারা ক্ষমতায় আসছে, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জার্মানির ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষের দেশ জার্মানিতে ভোটার প্রায় ৫ কোটি ৯২ লাখ। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬ লাখ। আর পুরুষ ভোটার ২ কোটি ৮৬ লাখ। এবারের নির্বাচনে জার্মান পার্লামেন্টের ৬৩০টি আসনের জন্য ২৯টি দল ৪ হাজার ৫০৬ প্রার্থী দিয়েছে।
গতকাল জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বার্লিনের অনতিদূরে পটসডামে ভোট দেন। ভবিতব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ভোট দিয়েছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকা হোকসাউরল্যান্ড জেলার আর্নসবার্গে।
চার বছর আগে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন দলের নেতা আঙ্গেলা ম্যার্কেল (সাবেক চ্যান্সেলর) ক্ষমতা থেকে সরে যান। পরে নির্বাচনে জয়লাভ করেন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলের নেতা ওলাফ শলৎজ। তিনি গঠন করেন তিনদলীয় জোট সরকার।
এবার নির্বাচনের আগের জরিপগুলোয় দেখা যায়, সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন দল। এরপর কট্টরবাদী জার্মানির জন্য বিকল্প দল। এরপর রয়েছে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের বড় দল সামাজিক গণতান্ত্রিক দল। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে পরিবেশবাদী সবুজ দল।
নির্বাচনী জরিপের হিসাবে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন দলটির নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎসকে সম্ভাব্য চ্যান্সেলর হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এবারের নির্বাচনে বড় চমক জার্মানির কট্টর রক্ষণশীল ও অভিবাসীবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত অলটারনেটিভ ফর ডয়চেল্যান্ড (জার্মানির জন্য বিকল্প) দলটির জরিপে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা।
নির্বাচনকে ঘিরে সারা বিশ্বের দৃষ্টি
জার্মানির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলো আলাদা দৃষ্টিতে দেখছে। এর অন্যতম কারণ হল এবারের নির্বাচনের আগে থেকেই সদ্য ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রশাসনের একাধিক রাজনীতিক কতৃক জার্মান রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। ইউরোপীয় ঐক্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং আগামীতে ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্ক। নির্বাচনের আগের দিন প্রযুক্তি ধনকুবের এবং ট্রাম্পের অনুগত পরামর্শদাতা ইলন মাস্ক জার্মানির কট্টরবাদী অল্টানেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটির পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দলটির নেত্রী অ্যালিস ভায়ডেলের সঙ্গে কথোপকথনের অডিওটি শেয়ার করে বলেন, শুধুমাত্র অল্টানেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটিই জার্মানিকে বাঁচাতে পারে। জার্মানির অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদরা এটিকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
মার্কিন গণমাধ্যম জার্মানির এ নির্বাচনকে বৃহত্তম ইউরোপীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে। ফ্রান্সের লে ফিগারো পত্রিকাটি জার্মান-ফরাসি সম্পর্কেরওপর আলোকপাত করেছে। তাদের চোখে সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস জার্মান-ফরাসি জোটের পুনরুজ্জীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
সরাফ আহমেদ, জার্মানি থেকে