জাপার কার্যালয় ‘দখল’ রওশনপন্থীদের

0
124

ঘণ্টা দেড়েকের জন্য জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয় ‘দখলে’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে রওশন এরশাদপন্থীরা। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলের কার্যালয়ে যান তাঁরা। দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সকাল ১০টার দিকে তাঁরা কার্যালয় ছেড়ে যান। এরপর জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের অনুসারীরা কার্যালয় ‘দখলে’ নেন।

জাপার দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম সন্ধ্যায় বলেছেন, সকালে ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক কার্যালয়ের ফটকে কড়া নাড়েন। ছুটির দিনের সকাল হওয়ায়, ওই সময়ে কর্মচারীরা ছাড়া কেউ ছিল না। নেতাকর্মীরা না থাকার সুযোগে বহিরাগতরা কার্যালয়ে প্রবেশ করে। পরে তারা নিজে থেকেই চলে গেছে। এরপর নেতাকর্মীরা এসেছেন, কার্যালয়েই রয়েছেন। বেদখল বা পুনর্দখলের প্রশ্ন আসছে না।

জাপার নেতৃত্ব নিয়ে জিএম কাদের এবং রওশন এরশাদের পুরনো বিরোধ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে চরমে পৌঁছেছে। ক্ষমতার লড়াইয়ে টিকতে না পেরে নির্বাচনে অংশ নেননি রওশন। তাঁর অনুসারীদের মনোনয়ন দেননি জিএম কাদের।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপার ভরাডুবির পর সক্রিয় হয়েছেন রওশন। নির্বাচনে জিএম কাদেরের ভূমিকার সমালোচনা করে পদ হারানো নেতারা তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। গত ২৮ জানুয়ারি সভা ডেকে নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন রওশন। জিএম কাদের এবং জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যহতির ঘোষণা দেন।

তাঁরা এইসব ঘোষণাকে আমলে না নেওয়ার কথা বললেও, পরের দিন দলীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দেন রওশন। আগামী ২ মার্চ সম্মেলন ডেকে নিজ অনুসারী কাজী মামুনুর রশীদকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন মহাসচিবের’ দায়িত্ব দিয়েছেন। গতকাল সকালে তাঁর নেতৃত্বে কাকরাইল কার্যালয়ে যান রওশনপন্থীরা।

কার্যালয়ে প্রবেশ করলেও মহাসচিবের কক্ষে বসেননি কাজী মামুন। কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, সাবেক চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জাতীয় পার্টির ক্ষতি করেছেন, ইমেজ নষ্ট করেছেন। কাদের-চুন্নুর জন্য আজ দলের বেহাল দশা। তাদের নেতৃত্বের প্রতি নেতাকর্মীদের আস্থা নেই। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে। আজ থেকে কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলাম।

কার্যালে যাওয়ার দিনক্ষণ আগাম জানায়নি রওশনপন্থীরা। গত ২৯ জানুয়ারি কাজী মামুন বলেছিলেন, কাকরাইল কার্যালয় এরশাদের ঘামে শ্রমে তৈরি। এরশাদের স্ত্রী হিসেবে রওশন এরশাদ কার্যালয়ে বসবেন। এর জবাবে চুন্নু বলেছিলেন, কাকরাইল কার্যালয়ে কোনো টোকাই আসার চেষ্টা করলে নেতাকর্মীরা ব্যবস্থা নেবে। কেউ জোর করে কিছু করতে পারবে না।

নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে টাকা পেলেও প্রার্থীদের দেননি জিএম কাদের– এ অভিযোগ তুলে তাঁর সমালোচনা করছেন ভোটে হেরে যাওয়া লাঙলের প্রার্থীরা। এ কারণে কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহহিয়া চৌধুরীকে অব্যহতি দেন জি এম কাদের। রওশন তাঁদেরকে পুনর্বহালের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সকালে কাকরাইল কার্যালয়ে যাওয়া নেতাদের মধ্যে ছিলেন সুনীল শুভরায় এবং শফিকুল ইসলাম সেন্টু। ছিলেন জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে পদত্যাগ করার ৬৭১  নেতাকর্মীর অনেকে।

শফিকুল ইসলাম সেন্টু ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। এ কমিটিও ভেঙে দিয়েছেন জিএম কাদের। তিনি বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হওয়ায় আজ তাঁকে সংবর্ধনা দেবে উত্তরের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি। একই দিনে জাপার সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের সম্মেলন করবে রওশনপন্থীরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.