রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নামে প্রতারণার অভিযোগে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মহাসচিব সাইফুল ইসলাম দিলদারকে তাঁর ছয় সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম দিলদারের নানা প্রতারণা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্মেলনকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে মানবাধিকার কমিশনের নামে বিভিন্ন বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থার প্রতারণার বিষয় তুলে ধরা হয়।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মানবাধিকার কমিশনের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ আদায় করছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামের একটি বেআইনি সংস্থা। মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন–২০০৯ অনুসারে একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। উক্ত আইনের ২ (ক) ধারামতে “কমিশন” অর্থ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।’
কামাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থার লোকজন তাঁদের সংস্থার নামের সঙ্গে ‘কমিশন’ শব্দটি ব্যবহার করে দেশে-বিদেশে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে ওই সংস্থাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা মর্মে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন। দেশের জনসাধারণ, সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা এমনকি গণমাধ্যমও নামসর্বস্ব ভুইফোঁড় মানবাধিকার সংগঠনের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কমিশন থেকে বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নিবন্ধনকারী সংস্থা এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর ও সমাজসেবা অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনজিও ব্যুরো ৮ জুন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নিবন্ধন বাতিল করে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কথিত বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামের বেসরকারি সংস্থার মহাসচিব সাইফুল ইসলাম দিলদার ও তাঁর লোকজনের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা ও এর বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের নিবন্ধিত বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সদস্য সংগ্রহ, কমিটি গঠন, যুক্তরাজ্যে মানবাধিকার কনভেনশনের নামে মানব পাচারকাজে প্রলুব্ধ করাসহ নানা অপতৎপরতা চালিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মহাসচিব সাইফুল ইসলাম দিলদার তাঁদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে যুক্তরাজ্য মানবাধিকার কনভেনশন–২০২৩ নামে একটি গণবিজ্ঞাপন প্রচার করে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হবে বলে লোক সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া এই সংগঠনের সদস্যরা তাঁদের ব্যবহৃত গাড়িতে পতাকা স্ট্যান্ড ও বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত সোনালি রঙের প্রতীক, যার ভেতরে প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ও সংক্ষেপে বিএইচআরসি শব্দ ব্যবহার করে নিজেদেরকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। সাইফুল ইসলাম দিলদার ও তাঁদের সহযোগীরা ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণার মাধ্যমে ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতারণার মাধ্যমে মানব পাচারের চেষ্টা করেন। এ জন্য তাঁরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রেসিডেন্ট, মহাসচিব বা সচিবের নাম ব্যবহার করেন। এভাবে রাষ্ট্রীয় জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের এই বিজ্ঞাপন কমিশনের নজরে আসার এবং অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা ও প্রচেষ্টা চালানোর জন্য দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৬ ধারা ও মানব পাচার আইনের ধারায় মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কথিত বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মালিবাগের অফিসে অভিযান চালিয়ে মহাসচিব সাইফুল ইসলাম দিলদারসহ তাঁর ছয় সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, সচিব নারায়ণ চন্দ্র সরকার, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. আশরাফুল আলম, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক, উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম এবং উপপরিচালক ফারহানা সাঈদ।