জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু বিধানটি সেভাবে কার্যকর নয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার এ বিধান পুরোপুরি কার্যকর করার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিধানটি কার্যকর করা গেলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা এবং মনোনয়নপত্র দেওয়ার সময় আচরণবিধি ভঙ্গের প্রবণতা বন্ধ হবে। কমিশনের সঙ্গে সংলাপেও অংশীজনদের অনেকে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান পুরোপুরি কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান নির্বাচনী বিধিমালায় সংযুক্ত করা হয়। গত সংসদ নির্বাচনে এই সুযোগ থাকলেও তা কার্যকর ছিল না বলা চলে। কেননা, সেটি পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক ছিল না। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সেটির কাগজপত্রও (হার্ড কপি) রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। এখন বিষয়টি পুরোপুরি অনলাইননির্ভর করার চিন্তাভাবনা চলছে। এটি নিয়ে কারিগরি দিক ও নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
সূত্র বলছে, তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি ইসি। নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবীব খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি বিষয়টি দেখভাল করছে।
জানতে চাইলে আহসান হাবীব খান বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার আন্তরিক ইচ্ছা নির্বাচন কমিশনের আছে। প্রথমে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ও উপনির্বাচনে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে। সেখানে অনলাইন মনোনয়ন কার্যক্রম সফল হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে। কোনো প্রার্থীকে সশরীর নির্বাচন কার্যালয়ে যেতে হবে না। সরাসরি কোনো কাগজপত্রও জমা দিতে হবে না। এতে মনোনয়ন দাখিল, গ্রহণ ও বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুততর হবে।
মনোনয়ন দাখিলে বাধা ঠেকাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে আহসান হাবীব খান আরও বলেন, এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিরা মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শোডাউন ও স্লোগান দিয়ে প্রথম দিনেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন। কিন্তু অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে না। মনোনয়নপত্র দাখিলে প্রার্থীদের সময় ও ব্যয়—দুটোই কম হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি প্রার্থীরা জামানতের টাকাও যাতে অনলাইনে পরিশোধ করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হবে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রাখা হবে। সেই সঙ্গে আলাদা একটি অ্যাপও থাকবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় সরকারের ছোট ছোট নির্বাচনে এ ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। প্রথম পর্যায়ে যেখানে পরীক্ষামূলকভাবে কাজটি করা হবে, সেখানে অনলাইন ও প্রচলিত কাগজপত্র দেওয়ার পদ্ধতি—দুভাবেই মনোনয়নপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করার চিন্তা করা হচ্ছে। কারণ কমিশন মনে করছে, বিষয়টি ঐচ্ছিক রাখা হলে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না।
সূত্রমতে, অনেকে প্রার্থীই অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন না। আবার প্রথম পর্যায়ে শুধু অনলাইনে মনোনয়নপত্র বাধ্যতামূলক করা হলে ঝামেলা তৈরি হতে পারে। কোনো ধরনের কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধানটি কার্যকর করা হবে। তবে মনোনয়নপত্র অনলাইনে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে কি না, পরবর্তী সময়ে সে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
তবে বিধানটি বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক উদ্যোগ। সরকারের যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা, এটি তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে। দ্বিতীয়ত, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তথ্যগুলো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইটে কমিশন চাইলে দিয়ে দিতে পারবে। তৃতীয়ত, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার থেকে বিরত রাখার যে চেষ্টা অনেক সময় দেখা যায়, সেখান থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। ভারতে বেশ কয়েক বছর আগেই এটি চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।