জলাবদ্ধ নগরী, দুর্ভোগ চরমে

0
139
টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ময়মনসিংহ নগরের বেশির ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাসাবাড়িতেও উঠেছে পানি। গতকাল সকালে ময়মনসিংহ নগরের চরপাড়া এলাকায়

ময়মনসিংহ নগরের ভাটিকাশর এলাকায় মিশনের সামনে গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় দেখা যায়, কয়েকজন পথচারী দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা ভাটিকাশর মিশন সড়ক দিয়ে বলাশপুরের বিভিন্ন এলাকায় যাবেন। কিন্তু ১৫ মিনিট ধরে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো রিকশা যেতে রাজি হচ্ছে না।

এর কারণ কী? জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, বলাশপুর ও ভাটিকাশর এলাকার প্রধান সড়কটিসহ প্রতিটি গলিতে হাঁটুসমান পানি। ওই পানি দিয়ে গেলে রিকশার ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা আছে। ফলে রিকশাচালকেরা সেখানে যেতে চাচ্ছেন না। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পরে বাধ্য হয়ে দুজন পানি মাড়িয়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন।

শুধু ভাটিকাশর আর বলাশপুর নয়, ময়মনসিংহ নগরের প্রধান প্রধান সড়কসহ অধিকাংশ অলিগলিতে গতকাল এমন চিত্র চোখে পড়ে। এ সময় নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে সড়ক ও অলিগলিতে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ভাটিকাশর মোড় থেকে মিশন স্কুলের সামনের সড়ক দিয়ে যেতে যেতে দেখা যায়, ভাটিকাশর ও বলাশপুর এলাকার সব কটি গলিতে প্রায় হাঁটুসমান পানি জমে আছে। মিশন স্কুলের সামনে তিন রাস্তার মোড় সামান্য উঁচু হওয়ায় সেখানে পানি নেই। পথচারীরা সেখানে জড়ো হয়েছেন।

সেখানে দাঁড়ানো লোকজন বলেন, কয়েক বছর ধরেই সামান্য বৃষ্টি হলেই ভাটিকাশর এলাকার প্রধান সড়কটিসহ সব কটি গলিতে পানি উঠে যায়। ইনতাজ আলী বলেন, এবার ঈদের আগের দিন থেকেই প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে পানি গলি থেকে পুরোপুরি নামেনি। নালাগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। বিভিন্ন স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। সেসব স্থানে ম্যানহোল দিয়ে পানি উপচে সড়কে উঠে আসছে।

দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরের চরপাড়া মোড় এলাকায় দেখা যায়, চরপাড়া থেকে গাঙ্গিনারপাড় যাওয়ার প্রধান সড়কটিতেও হাঁটুসমান পানি। একই অবস্থা চরপাড়া মোড় থেকে ব্রাহ্মপল্লি সড়কেও। ওই সড়কে পানি ওপর দিয়েই চলছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। কিছু লোকজন দেখা যায়, জুতা হাতে নিয়ে সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাচল করছেন।

বেলা পৌনে একটায় নগরের বাঘমারা সড়কেও দেখা যায় হাঁটুসমান পানি। সেখানে কয়েকটি গলির বাড়িতে পানি উঠে গেছে। কয়েকজন নারীকে ঘরের পানি সেটে বাইরে ফেলতে দেখা যায়। নর্দমা উপচে আবর্জনা ভেসে উঠছে সড়কের পানিতে। মোখলেছুর রহমান নামের একজন বাসিন্দা বলেন, ময়মনসিংহ নগরের জলাবদ্ধতার এ সমস্যা অনেক বছর ধরেই। এ বছর নগরের বিভিন্ন সড়ক ও নালা নির্মাণের কাজ হয়েছে। তবে তাতে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হয়নি। নগরের নয়পাড়া, সেহড়া, ডিবি রোড ও মুন্সীবাড়ি এলাকার সড়কেও জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

ময়মনসিংহের নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধ সড়ক দেখে মনে হলো সিটি করপোরেশন ড্রেন ও সড়ক সংস্কার করলেও সেগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। কোথাও কোথাও ওই সব ড্রেন দিয়ে উল্টো পানি সড়কে উপচে পড়তে দেখা গেছে। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন উন্নয়নকাজগুলো কার্যকর হচ্ছে না।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দুটি প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ নগরের সড়ক ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নকাজ চলছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মোট ৪৭৪ দশমিক ৮২ কিলোমিটার সড়ক ও ৩৪৫ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার নালা নির্মাণ করা হবে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, এটি সাময়িক দুর্ভোগ। ২০২৪ সালের মধ্যে সড়ক ও নর্দমার উন্নয়নকাজ সমাপ্ত হবে। তখন জলাবদ্ধতার সমস্যা কেটে যাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.