জমি দখলে নেতৃত্ব দেন রাজশাহীর ডিসি কার্যালয়ের কর্মচারী সেলিম

0
168
সেলিম রেজা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় জমি দখল নিয়ে দুই পক্ষের যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন, তার একটি পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের কর্মচারী সেলিম রেজা। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ডিসি অফিসের প্রভাব খাটিয়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখলে ভূমিকা রাখা ও ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে দেওয়ার অভিযোগ আছে।

এর আগেও নানা সময় জমি বিরোধপূর্ণ জমি কিনে সেগুলো স্ত্রী-স্বজনদের নামে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে সেলিম রেজার বিরুদ্ধে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি পুকুরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে দেওয়ার বিনিময়ে নিজ নামে জমি রেজিস্ট্রেশন করার অভিযোগে তাঁকে নিজ দপ্তর থেকে বদলি করা হয়।

গত সোমবার গোদাগাড়ী উপজেলার ইয়াজপুর গ্রামে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় গোদাগাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে একটি ‘অবহিতকরণ প্রতিবেদন’ দেন। সেখানে সেলিম রেজাকে সংঘর্ষের একটি পক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এতে তাঁর পদবি উল্লেখ করা হয়নি।

সেলিম রেজা রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানার কেশবপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম এরফান আলী। তিনি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এসএ শাখার উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা।

ইউএনওর পাঠানো প্রতিবেদনে ঘটনার স্থান ও সময় উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সরেজমিনে জানা যায় যে ওই এলাকায় সেলিম রেজা ও আশিক চাঁদের দাবিকৃত ১৪ বিঘা জমিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন সকালে সেলিম রেজা ১০ থেকে ১৫ জন নিয়ে ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে ধান লাগানোর জন্য যান। এই সময় আশিক চাঁদের লোকজন তাঁদের জমিতে ধান লাগাতে বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রতিবেদনে নিহত ও আহতদের নাম–ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের বিষয়ে গোদাগাড়ীর ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এই প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এখন পুলিশ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে।

ইউএনওর প্রতিবেদন অনুযায়ী সেলিম রেজা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখান থেকে এসে পরে তিনি অফিসেও উপস্থিত হয়েছিলেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী তমির মিয়া ওয়াক্‌ফ এস্টেটের জমি ছিল এগুলো। কিন্তু রেকর্ডে অন্য লোকের নাম আসে। এত দিন ধরে ওয়াক্‌ফ এস্টেটের পক্ষে বিভিন্ন লোকজন এসব জমি চাষাবাদ করতেন। এখন রেকর্ডে যাঁদের নাম আছে, তাঁদের থেকে জমি কিনে নিয়ে দখল করতে গেলে এই সংঘর্ষ বাধে।

সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী সেলিম রেজা গোদাগাড়ী উপজেলার অন্তত ৪টি মৌজার ১৬ একরের বেশি জমি স্বজনদের নামে রেজিস্ট্রেশন করে নেন। এর মধ্যে ইয়াজপুর মৌজার ১ দশমিক ৫৫ একর জমি নিজের ভাই সামসুজ্জোহা ও মামা শফিকুল ইসলামের নামে, পাকড়ী মৌজার ১ দশমিক ৯৪ একর জমি সামসুজ্জোহা ও শফিকুল ইসলামের নামে, ইয়াজপুর মৌজার ৭ দশমিক ২১ একর জমি সামসুজ্জোহা ও নিজের স্ত্রী সুফিয়াসহ আরও দু জনের নামে এবং ইয়াজপুর মৌজার ৫ দশমিক ৯৪ একর জমি ভাই সামসুজ্জোহার নামে রেজিস্ট্রেশন করে নেন। গত সোমবার এই জমিগুলোর একটির দখল নিতে গেলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার জে এল রামচন্দ্রপুর মৌজার ৩৬৫ দাগের একটি পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনের বিনিময়ে প্রায় দুই কাঠা জমি নিজ নামে রেজিস্ট্রেশন করে নেন। এ ঘটনায় কিসকো মুরমু নামের এক ব্যক্তি ভূমিসচিব বরাবর অভিযোগ করেন। গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে তদন্ত করতে বলা হয়। অভিযোগের পর সেলিম রেজাকে এসএ শাখা থেকে অন্য শাখায় বদলি করে দেওয়া হয়। কিন্তু পরে আর এ ঘটনার তদন্তই হয়নি। আগের জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বদলির আগেই সেলিমকে আবার এসএ শাখায় পুনর্বহাল করে যান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, তিনি নিজের নামে জমি কেনেননি। গোদাগাড়ীতে তাঁর স্ত্রীর নামে ‘সামান্য একটু’ জমি কিনেছেন। তবে ভাই ও মামার নামে জমি কেনার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়ে সেলিম রেজা বলেন, যে ব্যক্তি তদন্তের জন্য অভিযোগ করেছিলেন, পরে তাঁকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে জন্য তদন্ত হয়নি। তিনি বলেন, তিনি অনেক মানুষের উপকার করেন, কাজ করে দেন। এ জন্য অনেকেই তাঁকে ভুল বোঝে, তাঁর নামে অভিযোগ দেয়।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। আর এই সেলিম রেজা যে তাঁর অফিসের কর্মচারী, সে বিষয়েও তিনি অবগত নন। যদি ঘটনা সঠিক হয়, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, ডিসি অফিসের প্রভাব খাটিয়ে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকলে তিনি ছাড় দেবেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.