জঞ্জাল থেকে জ্বালানি উৎপাদন আশা দেখাচ্ছে

0
167
বন্যায় চীনের নর্দমা উপচে ওঠা পানি

ভবিষ্যতে ট্রেন, বাস, জাহাজ, উড়োজাহাজ চালাতে প্লাস্টিক জ্বালানি কাজে লাগানো যেতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের (প্ল্যান্ট) মধ্যে মল, নর্দমার জঞ্জাল, কাদা দেখলে বিবমিষা জাগতে পারে। কিন্তু সেখানেই ভবিষ্যতের জন্য অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি তৈরি হচ্ছে।

এই প্রচেষ্টার মূল ব্যক্তি হারাল্ড মায়ার। তিনি বলেন, ‘আমি উদ্ভাবকের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছ থেকে পেটেন্ট কিনে নিয়ে ভাবলাম, আমি রূপকথার জগতে আছি। কিন্তু অন্তরের তাগিদ আমাকে “শিট টু পাওয়ার” প্রযুক্তি হাতেনাতে যাচাই করতে বাধ্য করল। সেই দর্শনের ভিত্তিতে আমি অবিলম্বে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রস্তুত হলাম। প্রকৌশলীদের চাকরি দিয়েছি। সরকারি ভর্তুকি ছাড়াই আমি ৪০ লাখ ইউরো পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছি।’

অস্ট্রিয়ার লেওবেনে একটি পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন রূপ দেওয়ার কাজ চলছে। গোটা প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হয়। পয়ঃপ্রণালির তরল বর্জ্য শুকিয়ে তাতে অক্সিজেন যোগ করে পোড়ানো হয়। প্রায় দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস মাত্রায় উত্তাপ সৃষ্টি হয়। সেই প্রবল উত্তাপে প্লাস্টিকের মৌলিক উপাদানগুলো আলাদা হয়ে যায়। এর মধ্যে হাইড্রোজেনও রয়েছে, যা পরিশোধন করা হয়।

সেই প্রক্রিয়ার বর্জ্য পদার্থের মধ্যে অনেক পরিমাণ ফসফেট থাকে। সেই সঙ্গে উপজাত পদার্থ হিসেবে কার্বন ডাই-অক্সাইডও নির্গত হয়। কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়ে কার্বোনেটেড কোমল পানীয় (সফট ড্রিং) তৈরি করা যায়।

কোম্পানির প্রসেস টেকনোলজি বিভাগের প্রধান নাদিয়া রোমদানে বলেন, ‘প্লাস্টিকের মধ্যে অনেক হাইড্রোজেন থাকে, যা সাধারণত ব্যবহার করা হয় না। সেগুলো সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয় অথবা জঞ্জালের প্ল্যান্টে পুড়িয়ে ফেলা হয়। অথচ আমরা সেটি কাজে লাগাতে পারি।’

কিন্তু এমন উচ্চ তাপমাত্রা পেতে কি বিশাল পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করা হয় না? নাদিয়া রোমদানে বলেন, ‘এই জ্বালানি তো নর্দমার বর্জ্য থেকেই সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই স্লাজ শুকনা অবস্থায় খুব বেশি তাপমাত্রায় জ্বলতে পারে এবং সেই শক্তি উৎপাদন করে।’

হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্যে আগুন জ্বালানো হলো। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে এখন পর্যন্ত সব পরীক্ষা সফল হয়েছে। এবার একটানা প্রক্রিয়ায় সেই উৎপাদনকেন্দ্রে কার্যকারিতা যাচাই করা হচ্ছে।

হারাল্ড মায়ার বললেন, ‘আপাতত আমরা বিনিয়োগকারীর সন্ধান করছি। আমি কোম্পানির সহযোগীর সঙ্গে মিলে এখন যে প্রমাণ দিয়েছি, তার ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে বড় আকারে এটা করা সম্ভব। এখন পর্যন্ত আমিই একমাত্র বিনিয়োগকারী।’

হারাল্ড মায়ারের মতে, আগামী কয়েক বছরে হাইড্রোজেনের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যাবে। কারণ জলবায়ু বাঁচাতে পেট্রোলিয়ামের মতো জ্বালানির বিকল্প হিসেবে এই উৎসের ওপর নির্ভর করা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি হাইড্রোজেনের তুলনায় সস্তা।

নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে দুইয়ের মূল্যই প্রায় এক হয়ে যাবে। মায়ার বলেন, ‘আমরা মাত্র আড়াই ইউরো মূল্যে স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদন করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এত কম মূল্য সম্ভবই নয়।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.