অভিবাসন ও পুনর্বাসন-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এআইএমএসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিয়ার্স চেং বলেছেন, ‘কল্পনা করতে পারবেন না তারা কীভাবে অর্থ ব্যয় করছে। এটা উন্মাদনা।’ চেং এ প্রসঙ্গে তাঁর এক মক্কেলের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানান। ওই অনুষ্ঠানে তাঁকে দুর্লভ ‘ইয়ামাজাকি ফিফটিফাইভ’ হুইস্কি পরিবেশন করা হয়েছিল। এর এক বোতলের দাম আট লাখ ডলার (প্রায় ৮ কোটি ৪২ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ টাকা)।
চেংয়ের প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরে আসা ধনাঢ্য চীনাদের জন্য বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গাড়িচালক খুঁজতে সাহায্য করে। এসব পরিবারের শিশুদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তিতেও সাহায্য করে। একবার এ প্রতিষ্ঠান ৬১ হাজার ডলার (প্রায় ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৪৪ টাকা ) দামের চুরুটও কিনেছিল এক ধনাঢ্য চীনার জন্য।
সিঙ্গাপুরে আসা চীনারা রোলস রয়েস ও বেন্টলি গাড়িতে চড়েন। সেন্টোসা গলফ ক্লাবে তাঁদের নিয়মিত যাতায়াত থাকে। এ ক্লাবে বিদেশি সদস্যদের বছরে ৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার ( প্রায় ৭ কোটি ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮০ টাকা) পরিশোধ করতে হয়।
গলফ-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ব্লাজনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেনি টেও বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে আসা এসব চীনা ধনীদের অনেকেই তরুণ। তাঁরা কেতাদুরস্ত, নকশাদার পোশাক পরেন। তাঁরা নিজেরা দলের মধ্যে থাকেন, খাওয়াদাওয়া করেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
আমার অর্থ আমারই
চীনের আর্থিক খাতের ওপর দেশটির সরকারের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সমালোচনা করে ২০২০ সালের অক্টোবরে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। আলিবাবার সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপ যাত্রা শুরু করার মাত্র দুই দিন আগে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ট গ্রুপের পূর্বনির্ধারিত আইপিও স্থগিত করে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো চীনের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
চীনের কমিউনিস্ট দল একইভাবে চাপ প্রয়োগ করবে বলে আতঙ্কে রয়েছেন দেশটির অন্য শিল্পপতিরাও। তাঁদের আশঙ্কা, চীন সরকার কম দামে তাঁদের ব্যবসা দখল করে নিতে পারে। ব্যবসাবিষয়ক একজন হিসাবরক্ষক এএফপিকে এমন আশঙ্কার কথা বলেছেন।
ওই হিসাবরক্ষক বলেন, সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমাতে পারলে পরিবারের সম্পদ নিরাপদে রাখা যায়। কয়েক প্রজন্ম ধরে সম্পদ ভোগ করার সুযোগ থাকে।
শিল্প খাতের একটি সূত্র বলেছে, চীনের যেসব ধনাঢ্য ব্যক্তি সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন, তাঁরা দেশটিকে দ্বিতীয় নিবাস বলে মনে করেন। তাঁরা ভাবেন, যতক্ষণ সিঙ্গাপুরে আছেন, ততক্ষণ নিজেদের অর্থ নিজেদের কাছেই আছে।
চীনের অন্যতম বড় হাইডিলাও হটপট রেস্টুরেন্ট চেইনের একজন প্রতিষ্ঠাতা সিঙ্গাপুরে পারিবারিক কার্যালয় খুলেছেন।
সিঙ্গাপুরের দ্য মনেটারি অথরিটি বলছে, চীনের সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর পারিবারিক কার্যালয় ২০২০ সালে ছিল ৪০০টি। আর ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০।
ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদ ও পারিবারিক কার্যালয়বিষয়ক আইনি প্রতিষ্ঠান ডেন্টনস রোডিয়াকের সহপ্রধান লোহ কিয়া মেং বলেছেন, গত বছরের শেষ দিকে সিঙ্গাপুরে ১ হাজার ৫০০ পারিবারিক কার্যালয় করেছে চীনের ধনী ব্যক্তিরা। লোহ বলেন, গত বছরের শেষের দিকে প্রতি দুটি পারিবারিক কার্যালয়ের মধ্যে একটি চীনের হলে আশ্চর্য হব না।
পরিস্থিতি বদলাবে না
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের শূন্য কোভিড নীতি বদল ও বিধিনিষেধ তুলে নিলেও সিঙ্গাপুরে ধনীদের যাওয়া বন্ধ হবে না। বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণেও চীনের অনেক ধনী বিদেশে পাড়ি জমাতে চাইছেন।
আঞ্চলিক অর্থনীতিবিদ সং সেং উন বলেছেন, সিঙ্গাপুর এমন একটি অঞ্চল, যেখানে চীনের ধনীরা সহজেই ব্যবসা করতে পারেন। সিঙ্গাপুর ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিঙ্গাপুর নিরাপত্তা ইস্যুতে কৌশলী। সিঙ্গাপুর চীনের সঙ্গেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
লোহ বলেন, সিঙ্গাপুরে ধনী ব্যক্তিদের পারিবারিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গণমাধ্যমেরও নজর কেড়েছে। এতে সিঙ্গাপুরের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। অনেকেই ভাবছেন, ‘যদি বিশ্বের ধনীরা সিঙ্গাপুরে জড়ো হন, তাহলে আমি কেন নই?’