চিকিৎসকের সঙ্গে মারামারি সন্তানের চিকিৎসা করাতে এসে বাবা গ্রেপ্তার

0
193

ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭ বছরের সন্তান আদিবাকে ভর্তি করাতে বুধবার সকালে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন বাবা হাবিবুর রহমান ও মা সাথী আক্তার। কিন্তু চাপ থাকায় হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি সম্ভব না বলে হাবিবুরকে জানানো হয়। এমনকি জরুরি বিভাগে গিয়েও তারা আদিবাকে চিকিৎসক দেখাতে ব্যর্থ হন।

এ নিয়ে তর্কের এক পর্যায়ে হাসপাতালের এক চিকিৎসকের সঙ্গে হাবিবুরের মারামারি হয়। খবর পেয়ে পরে পুলিশ এসে হাবিবুরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ বলছে, হাবিবুরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ঘটনার পর অসুস্থ শিশুটিকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাকে নিয়ে বাড়ি চলে যান মা সাথী আক্তার। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ের অবস্থা ভালো না।

মানিকনগর এলাকায় বাসিন্দা সাথী আক্তার জানান, ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর গত দু’দিন আদিবাকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। আজ সকালে অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা তাকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দরজা বন্ধ পাই।

তিনি আরও জানান, একজন নার্সের কাছে মেয়ের অবস্থা জানিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলি। ওই নার্স আমাকে বলেছেন, ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু আমরা গিয়ে দেখি, চিকিৎসকের রুমের দরজা বন্ধ। নক করলে সেটা খোলেন একজন চিকিৎসক। আমার স্বামী ওই চিকিৎসককে বলেন, স্যার আমার বাচ্চা অনেক অসুস্থ, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তাকে একটু দেখেন। কিন্তু ওই চিকিৎসক সিট নাই জানিয়ে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে তিনি আমার স্বামীকে চড় মারেন। আমার স্বামীও ওই চিকিৎসকের শার্টের কলার ধরেন। এর পর হাসপাতালের আরও কয়েকজন এসে আমাদের মারধর করেছে।

সাথী আরও জানান, ওই চিকিৎসক তাঁর কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলে হাবিবুর রহমান দরজায় লাথি দেন এবং দরজা খুলতে বলেন। এক পর্যায়ে হাবিবুর ৯৯৯-এ ফোন করেন। পুলিশ এসে তখন হাবিবুরকে একটি কক্ষে নিয়ে বসায়। পরে আদিবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে শিশুদের জন্য নির্ধারিত ডেঙ্গু ওয়ার্ডে পাঠিয়ে স্যালাইন দেওয়া হয়। ওই অবস্থায় বাচ্চাসহ তিনি আবার নিচে এসে দেখেন, তাঁর স্বামীর হাতে হাতকড়া পরানো। কিছুক্ষণ পর তাঁকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। আমি দৌড়াদৌড়ি করে কিছুক্ষণ আগে বাসায় এসেছি। বাচ্চাও বাসায়, তার অবস্থা খুব খারাপ। এখন আমি থানায় যাব না, বাচ্চারে দেখব?

এদিকে মারামারির ঘটনা নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক বা কেউ কোনো কথা বলেননি। পরে দুপুরে ডেঙ্গু নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‌‘সকালের ওই ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি করেছে। ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটি শিশুকে নিয়ে তাঁর অভিভাবকরা হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু মুগদা হাসপাতালে এখন নতুন রোগী ভর্তির মতো অবস্থা নেই। কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটির অভিভাবকদের জানিয়েছিলেন, সেখানে একটা বিছানায় দুইজন করে শিশু আছে। সেখানে আরেকজন শিশুকে ভর্তি করলে চিকিৎসা যথাযথভাবে হবে না। তাকে স্যালাইনও দেওয়া যাবে না, সমস্যা হবে। বলেছিলেন, অন্য হাসপাতালে সিট খালি আছে, আপনারা সেখানে যান। কিন্তু ওই বাচ্চার অভিভাবক ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসকের ওপর চড়াও হন। সেখানে একটা টুল ছিল, সেটা দিয়ে মেরে ওই চিকিৎসকের হাত ভেঙে দেন। চিকিৎসকরা সারারাত কষ্ট করে চিকিৎসা দিচ্ছেন, রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সেখানে চিকিৎসকের ওপর আঘাত করা অন্তত গর্হিত কাজ।’

মুগদা থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, ডাক্তার-নার্সদের মারধরের অভিযোগে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে হাসপাতালের চিকিৎসক বনি আমিন মামলা করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.