মাস খানেক ধরে চালের দাম বাড়তি। ভোক্তা যখন চাল কিনতে কঠিন সময় পার করছেন, তখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে আটা-ময়দার বাজার। গত এক মাসের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা এবং ময়দার বেড়েছে ৫ টাকা।
রাজধানীর খুচরা বাজারে আজ শুক্রবার প্রতি কেজি খোলা আটা ৫০ থেকে ৫২ এবং প্যাকেট আটার কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খোলা ময়দার কেজি ৬৫ থেকে ৭০ এবং প্যাকেটজাত ময়দার কেজিতে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা গুনতে হয়েছে ক্রেতাকে। এক মাস আগে খোলা আটার কেজি ৪৫ থেকে ৪৮ এবং প্যাকেট আটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ছিল। অন্যদিকে খোলা ময়দার কেজি ৬০ থেকে ৭০ এবং প্যাকেট ময়দা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় কেনা যেতো।
দাম বাড়ার এমন চিত্র খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও দেখা গেছে। সংস্থাটি বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় ৪ শতাংশ।
ভরা মৌসুমে গত জানুয়ারি থেকে বাড়তে শুরু করে চালের বাজার। দাম কমাতে খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে। কোথাও কোথাও অবৈধ মজুতের অপরাধে খাদ্যগুদাম সিলগালা ও জরিমানার মতো পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। তবুও নিয়ন্ত্রণে আসেনি চালের বাজার। চালের পর এখন দ্বিতীয় খাদ্যশস্য আটা-ময়দার বাজারও ঊর্ধ্বমুখি। কয়েক মাস ধরেই একের পর এক নিত্যপণ্যের দর বাড়ার কারণে মানুষের খরচের পরিমাণও বেড়েছে।
ভোক্তারা বলছেন, চাল-আটার বাইরে অন্যান্য পণ্যের দর বাড়লে সেক্ষেত্রে কেনাকাটায় কাটছাঁট করার সুযোগ থাকে। ভোগের পরিমাণও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমানো যায়। কিন্তু চাল ও আটার মতো প্রধান খাদ্যশস্যের দর বাড়লে ভোগের পরিমাণ কমানো দুরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, বেঁচে থাকার তাগিদে চাল-আটা কিনতে হয়। ফলে এ দুটি খাদ্যপণ্যের দর বাড়লেও নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারের ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হয়।
আজ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কলোনি বাজারে কথা হয় রঙ মিস্ত্রি তাহের আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুই কেজি আটার (খোলা) দাম নিছে ১০৪ ট্যাকা। না কিনা তো উপায় নাই। মাছ-গোস্ত না হলেও চলে। রুটি-ভাত না খাই তো আর থাকন যায় না।’
আটা-ময়দার দাম বাড়ার পেছনে ডলারের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন আমদানিকারকরা। বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘বৈশ্বিক নানা কারণে আগে আমদানিতে সমস্যা ছিল। এখন সমস্যা অনেকটা কেটে গেছে। তবে মূল সমস্যা রয়ে গেছে ডলার সংকট ও মুদ্রার দামে। সরকার ডলারের দর ১১০ টাকা বললেও এলসি নিষ্পত্তি করতে গেলে ১২০ থেকে ১২৪ টাকা দরে ডলারের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে। আমদানিকারকদের বাধ্য হয়ে দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে।’
ডিমের দর আরও বাড়তি। গত সপ্তাহের তুলনায় ডজনে আরও ৫ টাকা বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজনে। ফলে এলাকাভিত্তিক ছোট বাজার ও পাড়া মহল্লার দোকানে প্রতি ডজন ডিম কিনতে ভোক্তাকে গুণতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। তবে বড় বাজারগুলোতে কেনা যাবে এর চেয়ে ৫ টাকা কমে। অন্যদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দর কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। ব্রয়লারের কেজি ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গরুর মাংসের বাজারে স্বস্তির খবর নেই। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে। কোথাও কোথাও ৭৫০ টাকাও নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহে কোনো টান দেখা যায়নি। তবে অন্য বছর মৌসুমের এ সময় পেঁয়াজের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে কেনা যেতো। এ বছর সেই চিত্র দেখা যায়নি। বাজারে এখন প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ কিনতে গেলে খরচ করতে হবে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা। অবশ্য এর দর চার-পাঁচ দিন আগের তুলনায় ৫ থেকে ১০ টাকা কম।
সবজির ভরা মৌসুম চলছে এখন। কিন্তু বাজারে গেলে মনে হবে শীতকাল নয়, গ্রীষ্মকাল চলছে। গ্রীষ্মের মতোই চড়া দরে সবজি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। ফুল ও বাঁধাকপির পিস আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। দুই-তিনটা ছাড়া বাকি সব ধরনের সবজির কেজি ৫০ টাকার উপরে। বেশিরভাগ সবজির দর ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। বিশেষ করে শীতের সময় শিমের কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা খরচ করতে হলে তা অস্বাভাবিকই লাগার কথা। তবে বরবটি ও বেগুনের কেজি এবং লাউয়ের পিস শতক ছাড়িয়েছে।
রোজার সময় সাধারণত শসার চাহিদা কিছুটা বাড়ে। এ সুযোগে রোজার আগেই সালাদের অন্যতম উপাদানটির দর বাড়িছেন ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহে ৬০ টাকার আশপাশে ছিল শসার কেজি। আজ দর বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে।
নতুন আলুতে বাজার ছেয়ে গেলেও দরে খুব বেশি তারতম্য ঘটেনি। প্রতি কেজি এখনও ৪০-এর কোটায়। টিসিবির তথ্যমতে, গত বছর এ সময় আলুর কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। এছাড়া মাছের বাজারে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। গত সপ্তাহে বেড়ে যাওয়া বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ।