চামড়া খাতে এক যুগে রাজস্ব কমেছে ১৬ কোটি মার্কিন ডলার

0
19
ঢাকার অদূরে সাভারের হরিণধরায় চামড়াশিল্প নগরে ওয়ার্ল্ড লেদার ডে ২০২৫ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক। শনিবার চামড়াশিল্প নগরের ডিটিআইইডব্লিউটিপিসিএলের সেমিনার হলে

সারা বিশ্বে চামড়া বা ফুটওয়্যারের চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। ১০ বছর ধরে চামড়া খাত কঠিন সময় পার করছে। অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে; কিন্তু চামড়ার ক্ষেত্রে চিত্র উল্টো। ২০১২ সালে চামড়া খাতে রাজস্ব ছিল ১১৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি ডলারে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব চামড়াশিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে।

ঢাকার অদূরে সাভারের হরিণধরায় চামড়াশিল্প নগরে ‘ওয়ার্ল্ড লেদার ডে ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। ‘বিয়ন্ড দ্য সারফেস: ইটস আওয়ার টাইম টু বি বিজিবল, ভোকাল অ্যান্ড রেসপনসিবল’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে শিল্পনগরের ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিটিআইইডব্লিউটিপিসিএল) সেমিনার হলে এ বৈঠকের আয়োজন করে ফুটওয়্যার এক্সচেঞ্জ।

ডিটিআইইডব্লিউটিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম শাহনেওয়াজের সঞ্চালনায় বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাপেক্স ট্যানারির প্রধান উৎপাদন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মাহমুদ খান, মার্সন ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে লেদার ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টস সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, চামড়াজাত পণ্য ও জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইএবি) পরিচালক মুশফিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশে চামড়া খাতের উন্নয়নে লেদার ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বড় ভূমিকা আছে। সেই ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে না। ২০ থেকে ৩০ বছর আগে যে ধরনের চামড়া প্রস্তুত হতো বাংলাদেশে, এখনো সেই ধরনের চামড়া তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনো উন্নয়ন নেই। ২০১২ সালে চামড়া খাতে রাজস্ব আয় ছিল ১১৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৪ সালে তা কমে ৯৭ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে। প্রতিযোগিতায় তাঁরা পিছিয়ে যাচ্ছেন।

এলএফএমইএবির পরিচালক মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘সারা বিশ্বে চামড়া বা ফুটওয়্যারের যে চাহিদা, সেই জায়গায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমরা সব সময় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে খাত-সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কীভাবে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে।’

অ্যাপেক্স ট্যানারির কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মাহমুদ খান বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে পানিরোধী চামড়ার বেশ ভালো চাহিদা। এটি নিয়ে তাঁদের কাজ করতে হবে। লেদার তৈরি করার জন্য কেমিক্যাল কারখানা গড়ে তুলতে হবে। অপার সম্ভাবনা থাকলেও বিপণনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এজেন্টের ওপর তাঁরা নির্ভর করছেন। পৃথিবীর সব দেশে চামড়া বাছাই হয় ছাতরা গ্রেড অনুসারে। কিন্তু বাংলাদেশে এজেন্টরা বাছাইকারীদের নিয়ে আসেন, তিনি চামড়া বাছাই করেন। এতে মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে তাঁদের কাজ করতে হবে।

বিটিএ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়াশিল্পের সংকট উত্তরণে শিল্প-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণ স্বাধীন নয়। বিসিক কর্মকর্তারা শিল্প মন্ত্রণালয় যেভাবে চালাচ্ছেন, সেভাবে চলছে। কলকাতায় চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক হচ্ছে প্রধান স্টেকহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডার। কিন্তু বাংলাদেশে পুরোপুরি উল্টো। এটি ঠিক করতে হবে, অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ট্যানারি মালিকদের শেয়ার বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, পোশাক খাতসহ অন্যান্য খাতে বেসরকারিভাবে উন্নয়ন হয়েছে। সরকার কিছু নীতিগত সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু চামড়াশিল্পের ক্ষেত্রে নীতিগত সহায়তা পাওয়া যায়নি। কেমিক্যাল আমদানির ক্ষেত্রে যে বৈষম্য, সেটি এখনো দূর হয়নি। বন্ডের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হয়নি। এগুলোর সমাধান করতে হবে।

ডিটিআইইডব্লিউটিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম শাহনেওয়াজ বলেন, সিইটিপির বিভিন্ন সংস্কারকাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ট্যানারি মালিকপক্ষ যদি ট্যানারি পরিচালনার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাগুলো মেনে চলে, তবে বর্জ্যের প্রি-ট্রিটমেন্টের ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এ ছাড়া স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ছয়টি ট্যানারিকে নিজস্ব অর্থায়নে ইটিপি করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও যারা করতে আগ্রহী হবে, তাদেরও অনুমোদন দেওয়া হবে। যদি আরও ১০টি ট্যানারি এভাবে ইটিপি করে, তবে সিইটিপি নিয়ে যে সমস্যা আছে, সেটির অনেকাংশেরই সমাধান হয়ে যাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.