ভারতের চন্দ্রযানের ল্যান্ডার ‘বিক্রম’র একটি রঙিন ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) ছবি প্রকাশ করেছে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) ইসরোর এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। খবর এনডিটিভির।
ইসরো জানায়, চন্দ্রযানের রোভার প্রজ্ঞান ও ল্যান্ডার বিক্রম ‘স্লিপ মুডে’ যাওয়ার কয়েক দিন আগে এই ছবি তোলা হয়। বিক্রমের থেকে ১৫ মিটার দূরে গিয়ে প্রজ্ঞান ছবিটি তোলে। খালি চোখে ত্রিমাত্রিক ছবিটিকে সাদা-কালো মনে হলেও ‘ত্রি-ডি গ্লাস’ পরলে রঙিন দেখা যাবে।
ইসরোর আরও জানায়, ত্রিমাত্রিক ছবিটি দু’ভাগে তুলেছে প্রজ্ঞান। নেভিগেশন ক্যামেরা ব্যবহার করে একবার বাঁ দিক থেকে এবং একবার ডান দিক থেকে তুলেছে। তারপর সেই ছবি দু’টিকে মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে নতুন ত্রিমাত্রিক ছবি, যেখানে চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার বিক্রমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
ন্যাভক্যাম স্টিরিয়ো ইমেজ প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অ্যানাগ্লাফ ত্রিমাত্রিক ছবিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ত্রিমাত্রিক ছবির বাঁ দিকের অংশটি রেড চ্যানেলের মধ্যে এবং ডান দিকের অংশটি ব্লু এবং গ্রিন চ্যানেলে অবস্থান করছে। ইসরো জানিয়েছে, ত্রিমাত্রিক এই ছবি ভালোভাবে দেখার জন্য বিশেষ ধরনের গ্লাস বা চশমার প্রয়োজন।
চাঁদে এখন রাত। সে কারণে সোমবার সকাল ৮টার দিকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ‘স্লিপ মুডে’ চলে গিয়েছে চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম। বিক্রমের আগে ঘুম পাড়ানো হয়েছিল রোভার প্রজ্ঞানকেও।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর চাঁদে আবার সূর্য উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। চাঁদে আলো ফুটলে ২২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞান ও বিক্রমকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
গত ২৩ আগস্ট চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম। অবতরণের কিছু পরে তার পেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে রোভার প্রজ্ঞান। সেটি ধীরে ধীরে চাঁদের মাটিতে ঘুরেছে। সেখান থেকে তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করে বিক্রমের মাধ্যমে তা আবার পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।
ইসরো জানিয়েছে, চাঁদে এখনো পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই সব হয়েছে। প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যা হয়নি।
বিক্রম ও প্রজ্ঞানের যে সমস্ত যন্ত্রপাতি রয়েছে, যেগুলোর সাহায্যে চাঁদে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে ও সংগ্রহ করেছে তথ্য, সেই সব যন্ত্র চলেছে সৌরশক্তিতে। ফলে চাঁদে যতক্ষণ সূর্যের আলো ততক্ষণই কার্যক্ষম তারা।
চাঁদের একেকটি দিন পৃথিবীর হিসাবে ১৪ দিনের সমান আর একেকটি রাত ১৪ রাতের সমান। চাঁদে রাত শেষে ভোর হলে বিক্রম আর প্রজ্ঞানের নতুন করে প্রাণপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা একেবারে নেই বলে উড়িয়ে দেয়নি ইসরো। তবে বিক্রম ও প্রজ্ঞানের বেঁচে থাকা নির্ভর করছে অনেক ‘যদি’ এবং ‘তবে’র ওপর।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমে আসা রাত অতিশীতল। এ সময় সূর্যরশ্মির একটি কণাও প্রবেশ করবে না চাঁদের দক্ষিণমেরুতে। তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে মাইনাস ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। তাতে চন্দ্রযান-৩-এর যন্ত্রপাতির বিকল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।