চট্টগ্রাম নগরের এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগুন লাগানোর ২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নগরের দুই নম্বর গেইট এলাকার মেয়র গলির চশমা হিলে তার বাড়ি। এসময় বাড়িতে থাকা মন্ত্রীর ব্যবহৃত দুটি গাড়ি ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরের ওয়াসা মোড়ে পাহাড়তলী-ডবলমুরিং-হালিশহর আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর অফিসেও ভাঙচুর ও আগুন দেয়।
প্রসঙ্গত, শিক্ষামন্ত্রী চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান। স্বাধীনতার ৫৩ বছরের মধ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে এভাবে হামলার ঘটনা এটিই প্রথম।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) তারেক আজিজ বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মিছিল থেকে প্রথমে এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। তারপর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাড়িতে ও গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়।
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান বলেন, ‘সন্ধ্যায় কিছু দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করে। এ সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।’ শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস রাহুল দাশ বলেন, ‘তারা বাড়ির সামনে থাকা গাড়িও ভাঙচুর করে। ইট পাটকেল নিক্ষেপ বাড়ির দরজা জানালা ভেঙে ফেলে। বাড়ির প্রধান ফটকও ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা।’
যেভাবে হামলা হলো মন্ত্রীর বাড়িতে
নগরের নিউ মাকের্ট মোড় থেকে দেওয়ানহাট হয়ে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল ষোলশহর এলাকায় পৌঁছায়। ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এসময় মিছিল থেকে একদল লোক নগরের চশমা হিলের দিকে মিছিল নিয়ে ঢুকে পড়েন। মিছিল নিয়ে তারা সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তারা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে সামনে থাকা তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। বাড়ির ভেতর ইট ছুড়তে থাকেন। বাড়ির প্রধান গেইট ভেঙে ফেলেন। নেতাকর্মীদের বসার জন্য রাখা অর্ধশত চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। ১৫-২০ মিনিট তাণ্ডব চালিয়ে সরে পড়েন তারা। হঠাৎ হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় বাড়িতে থাকা মানুষ ও আশপাশের মানুষজন আতংকিত হয়ে পড়েন।
হামলাকারীরা ছিলেন ৪০-৫০ জনের একটি দল
৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল হাতে রড, লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে প্রথমে বাড়ির গেইটে আক্রমণ করে। কেউ লাথি দিয়ে দিয়ে আঘাত করে প্রধান খুলে ফেলেন। এ সময় একটি অংশ চশমা হিলের রাস্তায় পাহারা দিচ্ছিল। আরেকটি দল অংশ নেয় ভাঙচুরে। প্রধান গেইট ভাঙার পর বাড়ির সামনে থাকা একটি প্রাইভেট কার, একটি জিপ ও একটি সিএনজি অটোরিকশায় ভাঙচুর করতে থাকেন তারা। এ তিনটি গাড়ি ভাঙচুরের পর ইট-পাটকেট নিক্ষেপ করে বাড়ির দরজা-জানালায়। ১৫-২০ মিনিট তাণ্ডব চালিয়ে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে ঘটনার সময় চট্টগ্রামের বাড়িতে ছিলেন না শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এমপি বাচ্চুর কার্যালয় আগুন
এর আগে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল থেকে নগরের টাইগারপাসে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর, ওয়াসা এলাকায় মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ও জিইসি মোড়ে এক নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। শনিবার বিকেল ৩টা থেকে নগরের নিউমার্কেট মোড়ে দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর বিকেল ৫টার কিছু সময় পর মিছিল নিয়ে টাইগারপাসের দিকে অগ্রসর হন আন্দোলনকারীরা। এসময় টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছে মিছিল থেকে একটি অংশ পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। তবে ওই সময় সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। কর্মসূচি ঘিরেও পুলিশের কোনো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। অফিসটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি সেখানে মাঝে মধ্যে নেতাকর্মীদের নিয়ে বসে সেখানে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দুর্বৃত্তরা অফিসে থাকা চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করেন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের পোস্টার ও ব্যানার ছিড়ে আগুন লাগিয়ে দেন।