ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে সাতক্ষীরায় আম পেড়ে অর্ধেক দামে বিক্রি

0
230
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আতঙ্কে বাগান থেকে আম পেড়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। সেই আমে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার ভরে গেছে। শুক্রবার দুপুরে

ঘূর্ণিঝড় মোখার আতঙ্কে সাতক্ষীরা জেলার চাষিরা আম পেড়ে ফেলছেন। ফলে বাজারে আমের মূল্য দুই দিনের ব্যবধানে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

আমচাষিরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানলে সব আম পড়ে যাবে। এ জন্য তাঁরা আগেভাবে আম পেড়ে ফেলছেন। এতে বাজারে দাম পাচ্ছেন না।

কৃষি বিভাগের ভাষ্য, আজ শুক্রবার পর্যন্ত মোখার সাতক্ষীরা জেলায় আঘাত হানার আশঙ্কা নেই। এ বিষয়ে তারা প্রচার-প্রচারণাও চালিয়েছে। কিন্তু আম পাড়া বন্ধ করতে পারছে না।

২৫ বিঘা জমিতে ১৫টি আমবাগান রয়েছে কলারোয়া উপজেলা কিসমত ইলিশপুর গ্রামের আমচাষি মো. কবিরুল ইসলামের।

তিনি বলেন, গত মৌসুমে আম চাষে লাভের মুখ দেখতে পারেননি। চলতি মৌসুমে আম ভালো হয়েছে। গত মৌসুমের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু এপ্রিল মাসের শেষের দিকে আকস্মিক ঝড়ে বিপুল পরিমাণে কাঁচা আম পড়ে যায়। এতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক। এ কারণে তাঁর এলাকার সব চাষি আম পেড়ে ফেলছেন। বাজারে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ আম ওঠায় অর্ধেকে নেমে এসেছে দাম। এতে তাঁরা লোকসান গুনছেন।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলায় ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগানের সংখ্যা ৫ হাজার ২৯৯টি। জেলায় আমচাষির সংখ্যা ১৩ হাজার ১০০। চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

প্রথম ধাপে ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ পাড়া ও বাজারজাত শুরু হয়। দ্বিতীয় ধাপে ১২ মে থেকে হিমসাগর আম পাড়া ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ১৮ মে ল্যাংড়া ও চতুর্থ ধাপে ২৮ মে আম্রপালি আম সংগ্রহ শুরু করার কথা।

২০টি বাগান কেনা ও পরিচর্চায় ২৩-২৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে সাতক্ষীরা সদরের কুকরালি এলাকার আমচাষি মোকছেদ মোড়লের।

তিনি বলেন, গাছে অনেক আম হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে চলতি বছর ৭-৮ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন। ঘূর্ণিঝড় মোখার আতঙ্কে দুই দিন ধরে আম পেড়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাজারে বিপুল পরিমাণ আম ওঠায় দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। দুই দিন আগে যে আম দুই হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছেন, তা আজ (শুক্রবার) বিক্রি হয়েছে এক হাজার টাকা মণ দরে।

সদর উপজেলার বাঁকাল এলাকার আমচাষি আনিসুর রহমান বলেন, ২৭টি বাগানে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। বিপুল পরিমাণ আম হওয়ায় ১০-১২ লাখ টাকা লাভের আশা করেছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে সব আম পেড়ে বিক্রি করছেন। কিন্তু বাজারে দর পাচ্ছেন না। এখন লাভ হওয়া তো দূরের কথা, আসল টাকা উঠলেই স্বস্তি পাবেন তিনি।

ঘূর্ণিঝড় মোখার আতঙ্কে চাষিরা আম পেড়ে ফেলতে পারেন, এমন আশঙ্কায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) সমন্বয় সভা করেছেন বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সভায় প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের অবহিত করেছেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী সাতক্ষীরা জেলায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। একই বার্তা আমচাষিদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাষিরা না শুনে আম পেড়ে ফেলছেন।

ভালো আমের দাম খুব একটা কমেনি জানিয়ে শেখ মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, আজ (শুক্রবার) সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের গিয়ে দেখেন, বিপুল পরিমাণে আম উঠেছে। চাহিদার তুলনায় কয়েক গুণ। ফলে এসব আমের দাম অর্ধেকে নেমে গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.