র্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় ছয় জেলা হতে এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। জেলাগুলো হলো খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রাম।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আজ সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এ কথা জানান। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
নিহত ছয়জন হলেন
খুলনা বাটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের গাওহড়া গ্রামের প্রয়াত গহর আলী মোড়লের ছেলে লাল চাদ মোড়ল।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের প্রয়াত নরিম মন্ডলের ছেলে শওকত মোড়ল (৬৫) সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে মারা যান।
বরিশাল বাকেরগঞ্জের দরিয়া দুই নম্বর ওয়ার্ডের চর দড়িয়াল গ্রামের আসমত আলী শিকদারের ছেলে জালাল শিকদার (৬৫) বাজারে যাবার পথে ডাল ভেঙে মারা যান। বরিশাল নগরীর রুপাতলী এলাকায় নির্মাণাধীন তিনতলা ভবনের ছাদের দেয়াল ধসে পড়েছে পাশে একটি টিনশেড ঘরের খাবার হোটেলে কর্মরত অবস্থায় মারা যান হোটেল মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মচারী মোকছেদুর রহমান। তারা দুজনই পটুয়াখালী ছোট বিঘা গ্রামের বাসিন্দা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো শরীফ (২৭) মারা যান। ফুফু ও বোনকে উদ্ধার করতে গিয়ে স্রোতে তলিয়ে প্রাণ যায় তার।
ভোলা দৌলতখান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মনিরের ছেলে মো. মাইশা (৪), বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৬ নম্বর সাচড়া ইউনিয়নের বাথানবাড়ী গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর (৫০) ও লালমোহন পশ্চিমচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মনোজা খাতুন। এর মধ্যে দুইজন গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। মনোজা খাতুন টিনের ঘরের নিচে চাপা পড়ে মারা যান।
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন টেক্সটাইল আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলায় নগদ সহায়তার ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬। এ ছাড়া দুর্গত মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে ১ হাজার ৪৭১টি মেডিকেল দল গঠন করা হয়েছে।