ঘণ্টা ধরে ফোনে কথা বলেও সমাধান পাননি পাইলট, বিধ্বস্ত হয়ে গেল এফ–৩৫

0
13
নিচে আছড়ে পড়ছে এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান, ছবি: এক্সে আপলোড করা ভিডিও থেকে নেওয়া

অত্যাধুনিক মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-৩৫–এর একজন পাইলট মাঝ আকাশে উড়তে উড়তেই প্রায় ৫০ মিনিট ধরে প্রকৌশলীদের সঙ্গে কনফারেন্স কলে কথা বলে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারলেন না। শেষ পর্যন্ত ২০ কোটি ডলারের ওই যুদ্ধবিমান আলাস্কার আইয়েলসন বিমানঘাঁটির রানওয়েতে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়েছে। পাইলট শেষ মুহূর্তে বিমান থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি যুদ্ধবিমানটি আকাশ থেকে ঘূর্ণি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। এর আগে পাইলট নিরাপদে প্যারাস্যুট দিয়ে বিমান থেকে বের (ইজেক্ট) হয়ে যান।

সিএনএনের হাতে আসা এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিমানটির নোজ ও প্রধান ল্যান্ডিং গিয়ারের হাইড্রোলিক লাইনে বরফ জমে যাওয়ায় গিয়ার কাজ করেনি। আর এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে।

এফ–৩৫ বিমানটি উড্ডয়নের পর পাইলট ল্যান্ডিং গিয়ার ভাঁজ করতে গেলে তা কাজ করেনি। আবার নামাতে চাইলে গিয়ার সোজা না হয়ে একদিকে আটকে যায়। গিয়ার ঠিক করার চেষ্টা করতে গিয়ে বিমানের অবস্থাটা এমন হয়, যেন সেটি মাটিতে নামানো হয়েছে।

তখনই পাইলট কাছের বিমানঘাঁটির চারপাশে চক্কর দিতে দিতে লকহিড মার্টিনের পাঁচজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কনফারেন্স কলে যুক্ত হন। তাঁদের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কথাবার্তা চলে।

পাইলট দুবার ‘টাচ অ্যান্ড গো’ অবতরণের চেষ্টা করেন, যাতে আটকে থাকা নোজের গিয়ার সোজা হয়, কিন্তু তা করতে গিয়ে পাইলট ব্যর্থ হন; বরং ল্যান্ডিং গিয়ার পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। সেন্সরে তখন দেখানো হচ্ছিল, বিমানটি মাটিতে আছে এবং জেটটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। শেষমেশ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে পাইলটকে বিমান থেকে বেরিয়ে (ইজেক্ট) আসতে হয়।

এয়ারফোর্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, নোজ ও ডান দিকের ল্যান্ডিং গিয়ারের হাইড্রোলিক সিস্টেমের এক-তৃতীয়াংশ তরল আসলে পানি ছিল। দুর্ঘটনার ৯ দিন পর একই ঘাঁটি থেকে আরেকটি বিমানে একই ধরনের সমস্যা হয়। তবে সেটি নিরাপদে অবতরণ করতে পেরেছিল। দুর্ঘটনার সময় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

তদন্ত শেষে বলা হয়েছে, পাইলটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া, কনফারেন্স কলে নেওয়া সিদ্ধান্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ উপকরণ ব্যবস্থাপনায় নজরদারির ঘাটতি—সব মিলিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

খরচ কমাতে গিয়ে মান বজায় না রাখা হয়নি বলে জেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনকে দায়ী করা হচ্ছে, অথচ যুদ্ধবিমানটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

২০২১ সালে একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের দাম ছিল প্রায় ১৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়ায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

গত নভেম্বরে সরকারি দক্ষতাবিষয়ক দপ্তরের প্রধান ইলন মাস্ক এফ-৩৫ কর্মসূচির সমালোচনা করেছিলেন। তিনি এই প্রকল্পের খরচ কমানোর অঙ্গীকারও করেছিলেন।

ইলন মাস্ক এক্সে লিখেছিলেন, এফ-৩৫–এর নকশায় আসলে শুরু থেকেই সমস্যায় ভরা ছিল। কারণ, এটিকে একসঙ্গে অনেক ধরনের কাজ করার জন্য বানানো হচ্ছিল, অনেকের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। এতে বিমানটি খুব ব্যয়বহুল ও জটিল হয়ে গেছে, যেটা সব কিছুই একটু একটু পারে, কিন্তু কোনো কিছুরই বিশেষজ্ঞ নয়। তাই সফল হওয়ার সুযোগই আসলে ছিল না।

মাস্ক আরও বলেন, ড্রোনের যুগে পাইলটসহ যুদ্ধবিমান আসলে অচল হয়ে গেছে। এগুলো শুধু পাইলটদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াবে।

যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবরক্ষণ দপ্তর জানায়, এফ-৩৫ প্রোগ্রাম ২০৮৮ সাল পর্যন্ত চলবে। এতে মোট দুই লাখ কোটি ডলারের বেশি খরচ হতে পারে।

নিউইয়র্ক পোস্ট

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.