গ্র্যাচুইটির পুরো টাকা একসঙ্গে পাওয়ার দাবিতে চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন

0
204
গ্র্যাচুইটির পাওনা টাকার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বুধবার সকালে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের প্রধান ফটকের সামনে

গ্র্যাচুইটির পাওনা টাকার দাবিতে ঠাকুরগাঁও ও ঝিনাইদহে চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। আজ বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে এবং ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের প্রধান ফটকের সামনে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, অবসরে যাওয়া ল্যাব বিভাগের কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান, ইক্ষু বিভাগের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, একসঙ্গে গ্র্যাচুইটির পুরো টাকা পাচ্ছেন না তাঁরা। কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করায় সেই টাকা কোনো কাজে আসছে না। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। টাকার অভাবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন না। কেউ কেউ অসুস্থতায় ভুগছেন। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতেও পারছেন না। কেউ আবার জমি বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ চলাচ্ছেন।

২০১৭ সালের পর থেকে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া ১৮৫ শ্রমিক-কর্মচারী গ্র্যাচুইটির পুরো টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। গ্র্যাচুইটির টাকার দাবিতে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

চিনিকলটির উৎপাদন বিভাগের কর্মচারী নারায়ণ চন্দ্র রায় ২০১৮ সালে অবসরে গেছেন। গ্র্যাচুইটি বাবদ তাঁর ১০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। অবসরে যাওয়ার ছয় বছর পেরিয়ে গেলে তিনি পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। ধারদেনা করে এখন নিজের চিকিৎসা খরচ চালাতে হচ্ছে তাঁকে। চিনিকলের কাছে টাকা পাওনা থাকলেও জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।

উৎপাদন বিভাগের আরেক কর্মচারী শামসুদ্দিন আহমেদ চার বছর আগে অবসরে গেছেন। গ্র্যাচুইটি বাবদ তাঁর ১৪ লাখ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি পেয়েছেন চার লাখ টাকা। সেটাও আবার পেয়েছেন কয়েক কিস্তিতে। শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কিস্তিতে টাকা দেওয়ায় আমাদের কোনোই লাভ হচ্ছে না। পাওনা সব টাকা একবারে দিলে সেটা কাজে লাগিয়ে সংসার চালানো যেত।’

অবসরে যাওয়ার পর গ্র্যাচুইটি বাবদ যানবাহন বিভাগের শ্রমিক আবদুল কাদেরের ১২ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি চিনিকল থেকে আট লাখ টাকার চিনি পেয়েছেন। সেই চিনি তিনি বিক্রি করেছেন ছয় লাখ টাকায়। রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মজিবর রহমান বলেন, ‘শরীরটা ভালো নেই। কবে মরে যাই ঠিক নেই। মরে যাওয়ার আগে গ্র্যাচুইটির পাওনা বাকি টাকা মনে হয় পাব না।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) সাইফুল ইসলাম বলেন, কোনো কর্মকর্তা বা শ্রমিক অবসরে গেলে করপোরেশনকে অবহিত করা হয়। করপোরেশন তাঁর প্রাপ্য পাওনা পরিশোধে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজনের জন্য একত্রে কিছু টাকা বরাদ্দ আসে। এই টাকা সমান অনুপাতে পরিশোধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আবারও টাকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে তা পরিশোধ করা হয়। চাহিদামতো বরাদ্দ না পাওয়ায় বকেয়া টাকার পরিমাণ বেড়েই চলছে।

এদিকে ঝিনাইদহে সকাল ১০টার দিকে শুরু হওয়া মানববন্ধনে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আতিয়ার রহমান, মোস্তফা জলিল, সোহেল আহম্মেদ, ফজর আলী, সদর উদ্দিন, সাইফুল্লাহ খালেদ প্রমুখ। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে তাঁরা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবির বিষয়ে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গ্র্যাচুইটির টাকা তাঁদের ন্যায্য পাওনা। বৃদ্ধ বয়সে এই টাকা নিয়ে তাঁরা বাকি জীবন কাটাবেন। এখন এই টাকা না পেয়ে তাঁরা পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে আছেন।

মোবারকগঞ্জ চিনিকলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আতিয়ার রহমান বলেন, টাকা নেই—এ অজুহাতে তাঁদের মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ঘোরানো হচ্ছে। চাকরি শেষে তাঁদের ন্যায্য পাওনা পেলে তাঁরা অবসর সময়টা ভালোভাবে কাটাতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা পরিবার নিয়ে অসহায় দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তাঁরা একত্র হয়েছেন। ‘অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন করছেন।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আতিয়ার রহমান আরও বলেন, মোবারকগঞ্জ চিনিকল থেকে তিন বছর আগে তিনি অবসরে গেছেন। তাঁর মতো এই চিনিকলের ২২০ জন অবসরে গেছেন। গ্র্যাচুইটিসহ তাঁদের মোট পাওনা ১৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া দেশের ১৬টি চিনিকলের ৪ হাজার শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা অবসরে গিয়ে টাকা পাচ্ছেন না। তাঁদের পাওনা ৪৩০ কোটি টাকা। এই টাকার জন্য তাঁরা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো ফল পাননি। তাই তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস ইমাম বলেন, সবাই চাকরি শেষে কিছু টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এই টাকা দিয়ে তাঁরা বাকি জীবনটা কীভাবে পার করবেন, তাঁর পরিকল্পনা করেন। তাঁরাও সেভাবে পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু টাকা না পাওয়ায় তাঁদের সব পরিকল্পনা শেষ হয়ে গেছে। যে কারণে তাঁরা আন্দোলন করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান বলেন, আন্দোলনে যাওয়া কর্মকর্তা–কর্মচারীরা অবসরকালীন টাকা পাবেন—এটা ঠিক। কিন্তু চিনিকলগুলো লোকসান দিয়ে আসছিল। যে কারণে তাঁরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। তারপরও বিষয়টি নিয়ে সরকারের কাছে করপোরেশনের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে। সরকার থেকে সম্প্রতি ৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যা তাঁদের পরিশোধ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.