ঘড়ির কাটায় দুপুর পৌনে ২টা। ঢাকা আরিচা মহাসড়কের সাভারের উলাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত পোশাক শিল্পের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান আল-মুসলিম গ্রুপের পোশাক কারখানায় কথা হয় সিনিয়র ম্যানেজার আবু রায়হানের সঙ্গে। তিনি জানালেন গ্যাস ও বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকটের কথা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই লোডশেডিং থাকে। আর গ্যাস রাত ১২টায় কোনো রকম পাওয়া যায়, আবার ভোর ৪টায় চলে যায়। এতে কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দিন দিন উৎপাদন কমে যাচ্ছে। একই অবস্থা সাভার ও আশুলিয়ার শত শত শিল্প কারখানার।
রোববার দুপুরে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ কারখানায় বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটরের মাধ্যমে চলছে কারখানাগুলো।
উলাইলের আনলিমা টেক্সটাইল কারখানার সিকিউরিটি ইনচার্জ আব্দুল গফুর বলেন, বিদ্যুৎ এই আসে এই যায়, কখন আসে কখন যায় কেউ বলতে পারে না। ৪ ঘণ্টায় ২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের এই লুকোচুরি খেলায় পোশাক কারখানায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
একই এলাকার বৃহত্তম পোশাক কারখানা স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড স্টিচেচ পোশাক কারখানার কর্মকর্তা লায়েস আতিকুর রহমান আতিক বলেন, যে প্রেসারের গ্যাস থাকলে কারখানা চলে, সেই রকম গ্যাসের চাপ পাওয়া যায় না। দিনে তো গ্যাসই থাকে না, রাতে খুব সামান্য থাকলেও তা দিয়ে কারখানার কোনো কাজ হয় না। এর মধ্যে আবার বিদ্যুৎ থাকে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সাভার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের সব পোশাক কারখানা।
তিনি আরও বলেন, আশুলিয়ায় আমাদের আরও কয়েকটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সব কারখানাতেই গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সময় মতো উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পারছি না। এছাড়া জেনারেটর ও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করাতে উৎপাদন ব্যয় প্রচুর বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ পোশাক কারখানা বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে।
আশুলিয়ার নরসিংপুর এলাকার কয়েকটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে পোশাক কারখানাগুলোতে তীব্র গ্যাস সংকট রয়েছে। এখানে গ্যাস নেই বললেই চলে। অধিকাংশ কারখানা বিকল্প ব্যবস্থা করে কারখানা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে কারখানা পরিচালনা করছে। বিদ্যুৎ দিন-রাতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পাওয়া যায়। ফলে কারখানাগুলোতে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
আশুলিয়ার হা-মীম গ্রুপের পোশাক কারখানা নেক্সট কালেকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিল্লাল হোসেন বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। শুধু আমাদের গ্রুপের প্রতিষ্ঠানই নয়, এই শিল্পাঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অন্যান্য শিল্প কারখানার মালিকেরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। দিন দিন কারখানায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে ও উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
‘গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নানাবিধ কারণে অধিকাংশ কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। পোশাক কারখানার মালিকরা না পারছে কারখানা চালাতে, আবার না পারছে বন্ধ করতে। কারণ অধিকাংশ পোশাক কারখানার মালিকেরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।’
তিনি আরও বলেন, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে কিছু কারখানা চললেও অধিকাংশ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এই পোশাক শিল্পখাতই বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে। তাই এ শিল্পখাতকে সচল রাখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য তিনি সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানান।