গুলিবিদ্ধ হওয়ার ৯৪ দিন পর মারা গেলেন শিবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান

0
166
উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান (৭০) গুলিবিদ্ধ হওয়ার ৯৪ দিন পর আজ বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

হারুনুর রশিদ খানের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান। এদিকে হারুনুর রশিদ খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঁইয়া রাখিলের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শিবপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ গেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তোলে স্লোগান দেন।

সন্ধ্যার পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কামারটেক, চৈতন্যা ও সৃষ্টিগড় এলাকায় অবরোধ করে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সড়কের বাড়িতে হারুনুর রশিদকে গুলি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর পিঠ (মেরুদণ্ড–সংলগ্ন) থেকে দুটি গুলি বের করা হয়। এর পর থেকেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মে মাসজুড়েই তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন।

হারুনুর রশিদ খানের ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান বলেন, ‘ঘটনার দিন হারুনুর রশিদ খানের পিঠে বিদ্ধ হওয়া দুটি গুলি বের করে আনা হলেও তাঁর শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। এর প্রভাবে তাঁর প্রস্রাবে সংক্রমণসহ হৃৎপিণ্ড ও কিডনিতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসার জন্য ৭ মে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯ মে শুক্রবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর পর থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টেই ছিলেন তিনি। আজ বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আমার বাবা শিবপুরের সাবেক সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খানকেও দুর্বৃত্তরা ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের দলীয় সমাবেশ করে ফেরার পথে গুলি করে হত্যা করে।’

ফজলে রাব্বি খান আরও বলেন, হারুনুর রশিদ খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে যাঁরা গুলি করেছেন, তাঁদের গ্রেপ্তারে কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি যাঁরা মদদ দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁরাও প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের সঙ্গে মিটিংসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে বেড়াচ্ছেন। এগুলো দেখে ও শুনে তাঁর চাচা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। আর সেই কষ্ট নিয়েই আজকে তিনি মারা গেলেন।

এর আগে হারুনুর রশিদ খান গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তাঁর ছেলে আমিনুর রশিদ খান বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন শিবপুরের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার, ইরান মোল্লা ও হুমায়ুন, পূর্ব সৈয়দনগরের মো. মহসিন মিয়া, মুনসেফেরচরের মো. শাকিল ও নরসিংদী শহরের ভেলানগরের গাড়িচালক নূর মোহাম্মদ। তাঁদের মধ্যে শাকিল, নূর মোহাম্মদসহ ১১ জন কারাগারে আছেন।

মামলার এজাহার বলা হয়, আসামিরা হারুনুর রশিদ খানের মুঠোফোনে কল করে এলাকার একটি মসজিদের জন্য অনুদান চাইতে আসেন। মহসিন মিয়া, ইরান মোল্লা ও শাকিল নামের তিনজন ঘটনার দিন সকাল সোয়া ছয়টার দিকে পাঁচতলা বাড়িটির তৃতীয় তলায় গিয়ে কল বেল চাপলে হারুনুর রশিদ খান নিজেই দরজা খুলে দেন। তাঁদের বসতে বলে আপ্যায়নের জন্য পেয়ারা নিয়ে আসেন তিনি। ঠিক তখনই ওই তিনজন পিস্তল বের করে দুটি গুলি করেন। এতে পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে হারুনুর রশিদ মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাঁরা সিঁড়ি বেয়ে নেমে মোটরসাইকেলে করে থানা–সংলগ্ন সড়ক ধরে পালিয়ে যান।

শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় করা মামলায় এজাহারভুক্ত ২ জনসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামের একজন দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রধান আসামিসহ পলাতক চারজন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে জেনেছি। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’

শোক

শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত ওই শোকবার্তায় প্রয়াত হারুনুর রশীদ খানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.