গাজীপুরের কোনাবাড়িতে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানার অফিসে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে এক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রোববার (২৯ জুন) রাতে অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে অবস্থিত গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড নামে একটি কারখানার ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে কারখানাটি অনিদিষ্টিকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের হলেও মারধরে জড়িত কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
নিহত শ্রমিক মো. হৃদয় (১৯) টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড কারখানায় ম্যাকানিক্যাল মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন।
এ ঘটনায় নিহত মো: হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ি থানায় গত ২৮ জুন মধ্যরাতে একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ২৯ জুন অভিযান চালিয়ে হাসান মাহমুদ ওরফে মিঠুন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত হাসান মাহমুদও একই কারখানার শ্রমিক।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মো হদয় গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ম্যাকানিক্যাল মিস্ত্রি (অনকল) হিসাবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো গত ২৭ জুন সকালে কারখানায় যায়। তবে ডিউটি শেষ করে বাসায় না ফেরায় নিহতের ভাই ও মা কারখানার দিকে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় কারখানার শ্রমিকরা হত্যার ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। তারা লাশের সন্ধান চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে আছে বলে জানায়। পরে তারা হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করে।
মামলার বাদি লিটন মিয়া জানান, গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ভেতরে আমার ভাইকে প্রচন্ড মারধর করে হত্যা করে। পরে এটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার লাশ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। এ সময় ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।
কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন বলেন, ওই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেইসাথে, অন্যদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে, ওই শ্রমিককে চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, শ্রমিক হৃদয়কে কারখানার ভিতরে একটি অফিস কক্ষে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে অচেতন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে বের করছে এবং মারধর করছে কয়েকজন। এ সময় তার মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। তাকে নির্দয়ভাবে পেটানোর পরও দাঁড় করানোর চেষ্টা করতেও দেখা যায়।