ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার মুখে ফিলিস্তিনের গাজায় চলছে তীব্র খাদ্যসংকট। খাবারের দোকানগুলোর সামনে ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়। ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, গাজার বেসামরিক মানুষকে ইচ্ছা করেই ক্ষুধার মুখে ঠেলে দিচ্ছে ইসরায়েল। একে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে দেশটি।
আজ সোমবার নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দখল করা গাজায় বেসামরিক মানুষকে ক্ষুধার মুখে ফেলাকে যুদ্ধে একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় খাবার, পানি ও জ্বালানি সরবরাহে বাধা দিচ্ছে। ইচ্ছা করে উপত্যকাটিতে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কৃষিজমিগুলো তছনছ করে দিচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য যেগুলো জরুরি, তা থেকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করছে।
এইচআরডব্লিউর এই প্রতিবেদনের কড়া সমালোচনা করেছে ইসরায়েল সরকার। সংস্থাটিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী ও ইসরায়েলবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিওর হায়াত বলেছেন, ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর হামাসের হামলা ও ৭ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানায়নি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ইসরায়েলিদের মানবাধিকার ও দুর্দশার দিকে নজর না দিয়ে শুধু গাজা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহত হন ১ হাজার ১৩৯ জন। সেদিন প্রায় ২৪০ জনকে ধরে এনে গাজায় জিম্মি করেন হামাস যোদ্ধারা। সেদিন থেকেই গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না মানবিক ত্রাণসহায়তা। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, গাজাবাসী যে সহায়তা পাচ্ছেন, তা ‘মহাসাগরে এক ফোঁটা পানির মতো’। এরই মধ্যে গত শুক্রবার ইসরায়েলের কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে গাজায় জরুরি সহায়তা সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে শুধু মিসরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে সেখানে ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছিল।
গাজায় দুই মাসের বেশি সময় ধরা চলা সংঘাতের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ছিল মাত্র সাত দিন। নতুন করে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মিসরের দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা গতকাল রোববার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামাস ও ইসরায়েল—দুই পক্ষই নতুন করে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। তবে কীভাবে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে মতৈক্য হয়নি।
ওই সূত্র জানিয়েছে, হামাসের দাবি, তারাই শুধু মুক্তি পেতে যাওয়া জিম্মিদের তালিকা তৈরি করবে। আর গাজায় অবস্থান করা ইসরায়েলি সেনাদের সীমান্তের বাইরে সরিয়ে নিতে হবে। ইসরায়েল জিম্মিদের তালিকার বিষয়টি মেনে নিলেও সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়নি।
এদিকে ইসরায়েলি গণমাধ্যম বলছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা আবারও শুরু করতে সবুজ সংকেত পেয়েছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া। জল্পনা ছিল, যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে মোসাদপ্রধানকে দূরে রেখেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। শুধু সামরিক শক্তি খাটিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে চাচ্ছিলেন তিনি।
এরই মধ্যে গাজায় অবিলম্বে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত নতুন একটি প্রস্তাবের ওপর আহ ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে আজই ইসরায়েল সফরে গিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।
উত্তর গাজায় নিহত ১১০
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ জানিয়েছে, গতকাল রোববার থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চলে অন্তত ১১০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশ নিহত হয়েছেন জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে চালানো এক বোমা হামলায়।
আজ গাজার মধ্যাঞ্চলেও হামলা হয়েছে। সেখানে কমপক্ষে ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। আর গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ১৮ হাজার ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭০০টির বেশি শিশু। আহত হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। আর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযানে নিহত হয়েছেন ৩০১ জন।
জেরুজালেম