গর্ভাবস্থা ও সন্তান প্রসবের পর অনেক নারীই কোমর ব্যথায় ভোগেন। সন্তান প্রসবের পর মায়েদের গর্ভাবস্থায় যেসব জটিলতা দেখা দেয়, তা ধীরে ধীরে আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে যায় । কিন্তু কোমর ব্যথা সহজে কমে না।
গর্ভকালীন তৃতীয় ট্রাইমেস্টার অর্থাৎ শেষ ধাপে কোমর ব্যথা বেশি হয় । মূলত গর্ভাবস্থার ৫-৭ মাসের মধ্যে ব্যথার অনুভূতি শুরু হয়। পেটের মধ্যে বাচ্চা বড় হওয়ার কারণে কোমরের সেন্টার অব গ্র্যাভিটি পরিবর্তন হয়। ফলে কোমরে বেশি চাপ পড়ে। কোমরের লোর্ডটিক কার্ভেচার বেড়ে যায়। এর ফলে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিক্সের ওপর চাপ পড়ে, মাসেল স্ট্রেইন হয় এবং সর্বোপরি মেরুদণ্ডের দৈর্ঘ্য বা লেন্থ কমে যায়। এ ছাড়া পেটের মাংসপেশি যেমন ট্রান্সভার্স অ্যাবডোমিনিস, মাল্টিফিডাস, পেলভিক ফ্লোরে অনেক চাপ পড়ে। এতে মাংসপেশিগুলো অল্পতেই ক্লান্তি বোধ করে । সে জন্য বডি পোশ্চার ধরে রাখতে পারে না এবং কোমর ব্যথা হয়।
চিকিৎসা: ফিজিওথেরাপি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন কার্যকরী চিকিৎসা। গর্ভাবস্থা ও সন্তান প্রসবের পর একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এক্সারসাইজ অনুশীলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো কোমরের মাংসপেশির শক্তি বজায় রাখে ও গর্ভকালীন কোমর ব্যথা অনেকাংশে কমায়।
খাদ্য তালিকা: ব্যথা নিরাময় করে এমন খাবার রাখুন খাদ্য তালিকায়। যেমন– মধু (ব্যথার স্থানে মধুর সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে মাখালে ব্যথা কমে), খেজুর, কালোজিরা, অলিভ অয়েল, তরমুজ, চেরি ফল, কালো আঙুর, কলা ইত্যাদি। এ ছাড়া লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, প্রচুর পানি পান করুন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট গায়ে রোদ লাগান, ৪০ মিনিট হাঁটুন, ধূমপান বর্জন করুন।
সতর্কতা: গর্ভধারণের পর মায়েদের অবশ্যই নিজেদের সঠিক যত্ন নিতে হবে। এ সময় নিয়মিত চেকআপের পাশাপাশি কিছু সতর্কতা পালন করা উচিত। যেমন–
১. বাচ্চা প্রসবের পর ৬-৮ সপ্তাহ সব ধরনের ভারী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. সঠিক মাত্রায় সুষম খাবার এবং প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
৩. প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম অর্থাৎ ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
৪. ভ্যাজাইনার আশপাশে যেসব জায়গায় ব্যথা, সেখানে আইসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি ভ্যাজাইনা পরিষ্কারের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।
৫. নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে হবে।
৬. বাচ্চা প্রসবের পর মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে।
লেখক: মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিজঅর্ডারস বিশেষজ্ঞ