বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার সঙ্গে বাংলাদেশের উপকূলের দূরত্ব কমছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় এই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে কক্সবাজার ও এর কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায়। এ জন্য চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আর পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরগুলোকে দেখাতে বলা হয়েছে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত।
আজ শনিবার সকাল থেকেই বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের সর্বত্র মেঘলা ও থমথমে আবহাওয়া বিরাজ করছে। বাতাস না থাকায় গরমের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে। সকালে বরিশালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে ৩০ দশমিক ৬ ডিগ্রি থাকলেও মেঘলা ও গুমোট আবহাওয়ার কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল অসহনীয়।
বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা আজ শনিবার দুপুরে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি পায়রা ও মোংলা বন্দরের কাছাকাছি অবস্থান করায় এর অগ্রভাবের প্রভাব বরিশাল অঞ্চলে আজ থেকেই পড়া শুরু করতে পারে।
বরিশাল আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ারে চর, দ্বীপ, নিম্নাঞ্চলে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এর প্রভাবে সর্বনিম্ন ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বা তারও বেশি অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে।
জেলেরা ফিরছেন উপকূলে
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে উত্তাল হতে শুরু করে। আজ শনিবার তা প্রবল উত্তাল রয়েছে। এতে শুক্রবার সকাল থেকেই সাগরে মাছধরা ট্রলারগুলো তীরে ফিরতে শুরু করে।
জেলেরা বলেছেন, সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় শুক্রবার অন্তত ৫০০ ট্রলার কিনারে নিরাপদে ফিরে এসেছে। এসব ট্রলার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ছাড়াও চরদুয়ানি, বরগুনার নলী বন্দর, নিশানবাড়িয়া, তালতলি, বরগুনা সদরের গুলিশাখালী এবং পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু ট্রলার সুন্দরবনের গহিনেও আশ্রয় নিয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে পাথরঘাটায় অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এফবি তরিকুল-৪ ও এফবি আল্লাহর দান-২সহ অন্তত ১০টি ট্রলারের মাঝি ও জেলেদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, শুক্রবার সকাল থেকেই বঙ্গোপসাগর উত্তাল হতে শুরু করে। প্রথমে জেলেরা মনে করেছিলেন, এটা স্বাভাবিক ঘটনা, হয়তো কিছু সময় পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা স্বাভাবিক না হয়ে বেলা যত গড়াতে থাকে, ততই সাগর রুদ্ররূপ ধারণ করতে থাকে। সাগরের পানি তীব্র গরম হয়ে যায়। ফলে অনেক জেলে দ্রুত জাল টেনে কিনারের দিকে ফিরতে শুরু করেন।
এফবি তরিকুল-৪ ট্রলারের মাঝি চান মিয়া বলেন, ‘ট্রলার নিয়ে আমরা শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে পাথরঘাটায় ফিরেছি। ফিরে আসার আগে সাগর খুবই উত্তাল অবস্থায় দেখে এসেছি। অবস্থা বেগতিক দেখে আগেভাগেই কিনারে ফিরেছি। এ অবস্থায় সাগরে অবস্থান করা দুরূহ হয়ে পড়ছিল।’
ওই জেলেরা বলেন, তাঁরা গভীর সাগরে ছিলেন। সেখানে রেডিও ও মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক কাজ করে না। তাই আবহাওয়ার খবর জানতে পারেননি। তবে বড় ঝড় হলে সাগরের পানি ও ঢেউয়ের রূপ ও বাতাসের অবস্থা দেখে তাঁরা অনুমান করতে পারেন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার বিষয়টি।
এফবি আল্লাহর দান-২ নামে একটি ট্রলারের মাঝি কবির হোসেন বলেন, গভীর সাগরে জেলেদের কাছে মূলত ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা পৌঁছাতে বেশ বিলম্ব হয়। তবে ট্রলারের মাঝি ও জেলেরা সাগরের পানিতে হাত দিয়ে পানির তাপমাত্রা বেশি হলে অনুমান করে তীরে ফেরা শুরু করেন। তিনি বলেন, পাথরঘাটা, পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, বাগেরহাট, রায়েন্দা, শরণখোলা ও চট্টগ্রামের অনেক ট্রলার সুন্দরবন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, দূরবর্তী এলাকার কিছু ট্রলার সুন্দরবন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। সাগর তীব্র উত্তাল হওয়ায় এখন আর কোনো ট্রলার সাগরে নেই।