‘খালেদা জিয়া, হাজী সেলিম নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না’

0
154
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমসহ দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্তদের কেউই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি জানান, হাইকোর্টের সর্বশেষ রায় অনুযায়ী, দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

আগের দিন রোববার একটি রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের ওপর সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য। জামিন বা সাজা স্থগিত থাকলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যদি তাঁর সাজা উপযুক্ত আদালতে বাতিল না হয়। আপিল বিচারাধীন থাকা মানে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্দোষ নন। একমাত্র উপযুক্ত আদালতে সাজা বাতিল হলে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্দোষ হবেন। দণ্ড বাতিল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির পাঁচ নেতার আলাদা আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর সংক্ষিপ্ত এ রায় ঘোষণা করেছিলেন। পাঁচ বছর পর সম্প্রতি দুই বিচারপতির সই শেষে ৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ে বিএনপির পাঁচ নেতার দুর্নীতির আলাদা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত করা হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে আপিলকারীদের সাজা স্থগিত করার কোনো সুযোগ নেই।  আবেদনকারীরা হলেন– ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. আব্দুল ওহাব, মো. মশিউর রহমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আমান উল্লাহ আমান।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান রোববার বলেছিলেন, নৈতিক স্খলনের মামলায় দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের অযোগ্য হন। সংবিধানের এ-সংক্রান্ত ৬৬ (২) (ডি)-এর ব্যাখ্যা দিয়ে আদালত একটি রায় দিয়েছেন। রায়ে বলেছেন, সাজা কখনও স্থগিত হয় না। দুর্নীতি মামলায় দণ্ড পাওয়া কিছু ব্যক্তি বিচারাধীন আপিলে একটি দরখাস্ত দিয়েছেন সাজা স্থগিতের জন্য। কারণ সাজা স্থগিত না হলে তারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সেটার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাইকোর্ট। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড বহাল থাকবে– কাজেই সাজা কখনও স্থগিত হয় না।

সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি– (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।’

এ পাঁচ আবেদনকারীর বিষয়ে বলা হয়েছে, আবেদনকারীদের জামিন দেওয়া হয়েছে, তবে এটি বলা যায় না যে, তারা খালাস পেয়েছেন বা তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বা তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে বা শেষ পর্যন্ত তারা দোষী সাব্যস্ত ও সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন। ফলে সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডিতদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তা উপযুক্ত আদালতে স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানই এখানে প্রাধান্য পাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.