বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশত্যাগ করবেন। এ সময় মেডিকেল বোর্ডের সাতজন চিকিৎসক, নার্স ও তিনজন সহকারীসহ মোট ১৬ জন তার সঙ্গে যাবেন।
‘লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ যোগে বিএনপি নেত্রীকে প্রথমে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে, পরে সেখান থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী অন্য কোনো দেশের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হেলথ সেন্টারে নেওয়া হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে একটি বিশেষাষিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে। ১ অথবা ২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া রওনা দেবেন। এর মাধ্যমে প্রায় ৮ বছর পর লন্ডনে তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে তার দেখা হবে। সেখানে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সব শেষে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পথে পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরবেও যাওয়ার কথা রয়েছে বিএনপি নেত্রীর। তবে বিষয়টি নির্ভর করবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ম্যাডাম চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু স্ট্যাবল আছে। দ্রুত তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে। সময়মতো সবকিছুই অবহিত করা হবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেকজন চিকিৎসক জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে অনেক ভালো। তিনি মানসিকভাবে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, লন্ডনের ভিসা ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা এখনও পাওয়া যায়নি।
বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) লন্ডন যাওয়ার আগে তার আমেরিকার ভিসা কনফার্ম করার চেষ্টা চলছে।
খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ম্যাডামের যাওয়ার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই কবে যাচ্ছেন তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না।
খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সাত চিকিৎসক (অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন, অধ্যাপক ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. নূর উদ্দিন, প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিক, ডা. জাফর ও ডা. আল মামুন), পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, গৃহপরিচালিকা ফাতেমা ও রূপার যাওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়া ও তার যাত্রা সঙ্গীদের ভিসা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা প্রদানসহ বিষয়টি তদারকি করছে।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর থেকে ৬ মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেত্রীর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল সরকার।
এমন অবস্থায় গত ৫ আগস্ট গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর গত ২১ আগস্ট এভারকেয়ার হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে বাসায় ফেরেন তিনি।