খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে ‘ভুয়া ধর্ষণ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ। এ নিয়ে বিতর্ক হয়।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ পরে জানান, এই অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ ব্যবহার করার জন্য তিনি ‘বিব্রত ও দুঃখিত’৷ হান্নান এবার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না৷ ধর্ষকের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ, পরবর্তী বিক্ষোভ-সহিংসতা ও তিনজন গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় এনসিপির বিরুদ্ধে নীরবতার অভিযোগ তুলে আজ সোমবার সকালে পদত্যাগ করেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একমাত্র প্রতিনিধি অলিক মৃ৷ পদত্যাগের কারণ হিসেবে অলিক মৃ হান্নান মাসউদের ‘ভুয়া ধর্ষণ’ শব্দচয়নকে মিথ্যাচার উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানানোর কথাও বলেছেন৷
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) পদ থেকে অলিক মৃর পদত্যাগের ঘোষণার কিছুক্ষণ পর হান্নান মাসউদ এক ফেসবুকে পোস্টে লেখেন, ‘আবারও বলছি- একটি ধর্ষণের ঘটনাকে সামনে এনে পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে৷…আমার দেশের সার্বভৌমত্বকে যারা হুমকির মুখে ফেলবে, তাদের বিরুদ্ধে আমি জীবন দিয়েও লড়ে যাব৷ এদেশের একটি ধূলিকণা নিয়েও কাউকে ষড়যন্ত্র করতে দেওয়া হবে না৷ এসব ফালতু সুশীলগিরি এবার থামান৷’
তবে কিছুক্ষণ পর ওই পোস্ট মুছে দেন হান্নান মাসউদ৷ বেলা দুইটার কিছু পরে আরেকটি পোস্ট দেন তিনি৷ সেখানে হান্নান লিখেছেন, ‘গতকাল (রোববার) দ্বীপ হাতিয়ার (নোয়াখালী জেলার একটি উপজেলা) চানন্দী ইউনিয়নে এক সমাবেশে আমি ভুলবশত ও তাৎক্ষণিকভাবে ‘ভুয়া ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার করে ফেলি, যা কোনোভাবেই আমার ইন্টেনশন (উদ্দেশ্য) ছিল না৷ ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না৷ ধর্ষকের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷ এই অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দটি ব্যবহার করায় আমি বিব্রত ও দুঃখিত আশা করি, আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, সমর্থক ও সমালোচকেরা এটাকে আমার মুহূর্তের ভুল হিসেবেই বিবেচনা করবেন৷’
এনসিপির এই নেতা আরও লিখেছেন, পাহাড় ও সমতলের বাংলাদেশের সব নাগরিকের প্রতি আহ্বান থাকবে, পরাজিত ও ফ্যাসিবাদী শক্তির সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ঐক্যবদ্ধ থাকুন আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন উভয় পক্ষের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই৷

হান্নান গতকাল হাতিয়ায় দেওয়া যে বক্তব্যের কথা পোস্টে উল্লেখ করেছেন, সেখানে তিনি খাগড়াছড়ির ঘটনা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে৷ ভারত আমাদের পার্বত্য অঞ্চল কেড়ে নিতে চায়৷ তারা শেষ ট্রাম্পকার্ড খেলছে, পার্বত্য অঞ্চলকে তারা অস্থিতিশীল করে তুলছে৷ একটা ভুয়া ধর্ষণের ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা আমাদের বাঙালি ও পার্বত্য পাহাড়িদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে৷ বাংলাদেশের মানুষ এই ভূখণ্ডের এক ইঞ্চিও ছাড়বে?…ভারতকে জবাব দেওয়া হবে৷ বাংলাদেশ সরকারকে এ জবাব দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে৷’