খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারার মধ্যেই চলছে সড়ক অবরোধ, পরিস্থিতি থমথমে

0
35
খাগড়াছড়িতে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। তাই শহরজুড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আজ সকাল সাড়ে আটটায় শহরের চেঙ্গী স্কয়ার থেকে তোলা

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’–এর ব্যানারে ডাকা সড়ক অবরোধ চলছে। আজ রোববার সকাল থেকে শহরে কোনো ধরনের যান চলাচল করতে দেখা যায়নি। বন্ধ রয়েছে শহরের বেশির ভাগ দোকানপাট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বেলা দুইটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সদর উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় এবং গুইমারা উপজেলায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। পাহাড়িদের অভিযোগ, ১৪৪ ধারা জারির মধ্যেই তাঁদের ওপর আবার হামলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে চার দাবিতে গতকাল মধ্য রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ঘোষণা করেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, শহর এলাকায় কোনো ধরনের পিকেটিং করতে দেখা না গেলেও অবরোধের সমর্থনে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা অবস্থান নিয়েছেন। কিছু জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেছেন অবরোধকারীরা। গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাজেক থেকে প্রায় ২ হাজার ২০০ পর্যটককে নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারায় খাগড়াছড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের বলেন, গতকাল পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় ২৩ জন সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। দুজনকে ভর্তি করা হয়েছিল, তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে চলে গেছেন।

বহাল রয়েছে ১৪৪ ধারা, এর মধ্যেই চলছে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি, তাই ফাঁকা রাস্তাঘাট। শহরের অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। আজ সকালে শাপলা চত্বর এলাকা থেকে তোলা
বহাল রয়েছে ১৪৪ ধারা, এর মধ্যেই চলছে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি, তাই ফাঁকা রাস্তাঘাট। শহরের অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। আজ সকালে শাপলা চত্বর এলাকা থেকে তোলা

চার দাবিতে অবরোধ

এদিকে গতকালের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর চার দাবিতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দাবিগুলো হলো ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত অন্য দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, ‘জুম্ম ছাত্র-জনতার’ সমাবেশে হামলাকারীদের বিচার, আহত শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া এবং সমাবেশে হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিচার নিশ্চিত করা।

জানতে চাইলে জুম্ম ছাত্র-জনতার অন্যতম মুখপাত্র দ্বীপায়ন ত্রিপুরা বলেন, ‘সাধারণ জনগণের দাবিতে আবারও অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে। অবরোধে সাংবাদিক, সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরি সেবার সব যান চলাচল করতে পারবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়া শান্তিপূর্ণ অবরোধ পালন করার জন্য আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন আজ সকালে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শহরের কোথাও কোনো জায়গায় পিকেটিং করতে দেখা যায়নি।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাত নয়টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীল নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

ধর্ষণের ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদে সমাবেশ হয়েছে। খাগড়াছড়িতে গতকাল এ ঘটনার বিচারের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি ছিল। এ কর্মসূচিকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.