বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে শুরুটা ভালো হয়েছে বাংলাদেশের। গুয়াহাটিতে গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এ ম্যাচে খেলেননি। আগামী ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ সামনে রেখে বিশ্রামে আছেন সাকিব।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি তিনি ফুরফুরে মেজাজে খেলতে পারলে লাভ বাংলাদেশেরই। ব্যাটিংয়ে নেমে রান পেলে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে উঠে আসার পথটা আরও পরিষ্কার হবে সাকিবের সামনে।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় এখন নয়ে আছেন সাকিব। ২০০৭ থেকে এ পর্যন্ত মোট চারটি বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচে ১১৪৬ রান করেছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষেই তালিকার নয়ে উঠে এসেছিলেন বাংলাদেশের এই তারকা অলরাউন্ডার। এখন তাঁর সামনে আরও ওপরে ওঠার সুযোগ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে অন্তত ৬২ রান করলেই দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সকে টপকে সাকিব উঠে আসবেন শীর্ষ পাঁচে। ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপ খেলা ডি ভিলিয়ার্স ২৩ ম্যাচে করেছেন ১২০৭ রান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে না হলেও সমস্যা নেই, একটু দেরি হবে, এ–ই যা!
বিশ্বকাপে নকআউট পর্বের আগে ৯টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচসংখ্যা দেখে বলাই যায়, শুধু ডি ভিলিয়ার্স কেন, কুমার সাঙ্গাকারাকে টপকে শীর্ষ তিনেও উঠে আসতে পারেন সাকিব। প্রয়োজন শুধু গত বিশ্বকাপের মতো উত্তুঙ্গ ফর্ম!
২০১৯ বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে ৬০৬ রান করেছিলেন সাকিব। সেটি ছিল আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। সাকিব যদি এবার ন্যূনতম ৫০০ রানও করতে পারেন, তাহলেই শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি সাঙ্গাকারাকে টপকে উঠে আসবেন শীর্ষ তিনে। ২০০৩ থেকে মোট চারটি বিশ্বকাপ খেলা সাঙ্গাকারা ৩৭ ম্যাচে করেছেন ১৫৩২ রান। আর যদি গত বিশ্বকাপের মতো ন্যূনতম ৬০০ রান করতে পারেন, তাহলে পেছনে পড়বেন দ্বিতীয় রিকি পন্টিংও।
১৯৯৬ থেকে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলা অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি পন্টিং ৪৬ ম্যাচে করেছেন ১৭৪৩ রান। সাকিব এবার অন্তত ৬০০ রান করতে পারলে বিশ্বকাপে তাঁর রানসংখ্যা হবে ১৭৪৬। তবে শীর্ষে থাকা শচীন টেন্ডুলকারকে ধরার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ১৯৯২ থেকে ছয়টি বিশ্বকাপ খেলা ভারতীয় কিংবদন্তি ৪৫ ম্যাচে করেছেন ২২৭৮ রান।
তবে সাকিব অন্য একটি তালিকায় কিন্তু শীর্ষে। জাতীয় দলের হয়ে এখনো খেলে চলা ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বকাপে তাঁর রানসংখ্যাই সর্বোচ্চ। চার বিশ্বকাপে খেলা সাকিবের রানসংখ্যা তো আগেই বলা হয়েছে (১১৪৬)। জাতীয় দলের হয়ে এখনো খেলে চলা ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বকাপে রানসংখ্যায় সাকিবের পরই দুইয়ে ভারতের বিরাট কোহলি। ২০১১ থেকে এ পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপে খেলা কোহলি ২৬ ম্যাচে ১০৩০ রান করেছেন। ১৮ ম্যাচে ৯৯২ রান করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার।
নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল বিশ্বকাপে ২৭ ম্যাচে ৯৯৫ রান করলেও এবার বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি এই ওপেনার। তাই এবার বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে এই টুর্নামেন্টে রানসংখ্যায় তিনে ওয়ার্নার।
জাতীয় দলের হয়ে এখনো খেলে চলা ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু সাকিব ও কোহলিই ন্যূনতম ১০০০ রান করেছেন বিশ্বকাপে। আর এবারের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে এই টুর্নামেন্টে রানসংখ্যায় ওয়ার্নারের পর তিনটি নাম যথাক্রমে—রোহিত শর্মা (১৭ ম্যাচে ৯৭৮ রান), কেইন উইলিয়ামসন (২২ ম্যাচে ৯১১ রান) ও মুশফিকুর রহিম (২৮ ম্যাচে ৮৭৭ রান)।
সাকিব তো তারকা অলরাউন্ডার, আর বিশ্বকাপে অলরাউন্ডারদের পারফরম্যান্স যাচাই করলেও দারুণ এক তালিকায় এখনই শীর্ষে অবস্থান করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বিশ্বকাপে অন্তত হাজার রান এবং ন্যূনতম ৩০ উইকেট নেওয়া অলরাউন্ডারদের তালিকায় শীর্ষে সাকিব।
বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ২৯ ম্যাচে ৩৪ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। বর্তমানে জাতীয় দলে খেলা কোনো ক্রিকেটারই সাকিবের সঙ্গে এ তালিকায় নাম লেখাতে পারেননি। অর্থাৎ, বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব একাই এই অভিজাত ক্লাবের সদস্য। অন্তত ২০ উইকেট এবং ন্যূনতম ১ হাজার রানের তালিকাতেও সাকিব একমাত্র সদস্য।
সাবেকদের বিবেচনায় নিলে বিশ্বকাপে ন্যূনতম ১ হাজার রান ও অন্তত ২০ উইকেটশিকারিদের তালিকায় সাকিবের সঙ্গী মাত্র দুজন—শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়া (৩৮ ম্যাচে ১১৬৫ রান ও ২৭ উইকেট) ও দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস (৩৬ ম্যাচে ১১৪৮ রান ও ২১ উইকেট)।