কোন কৌশলে সমঝোতা খুঁজছে আ.লীগ-জাপা

0
87
লোগো

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের কথা বললেও সমঝোতা করে ভোট করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। বুধবার দুই দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বৈঠক সূত্র জানায়, সমঝোতার কৌশল এখনও ঠিক হয়নি। আরও বৈঠক হবে।

আজ বৃহস্পতিবার জাপার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে এর আগে দিনভর লুকোচুরি করে জাপা। দুই দল আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, কখন কোথায় বৈঠক হয়েছে। সূত্রের খবর, গুলশানের একটি বাড়িতে গতকাল রাত ৮টায় এ বৈঠক শুরু হয়ে ঘণ্টাদুয়েক চলে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। মুজিবুল হক চন্নু ছাড়াও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছিলেন বৈঠকে।

জাপা সূত্র জানায়, দুই উপায়ে সমঝোতার আলোচনা হয়েছে। প্রথম উপায়ে, আওয়ামী লীগ যেসব আসন জাপাকে ছাড়বে, সেখানে নৌকার প্রার্থী থাকবে না। অন্যত্র নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে লড়বে লাঙল।
বিএনপিবিহীন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে সমঝোতার দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে, প্রার্থিতা বৈধ হওয়াসাপেক্ষে সব আসনে নৌকা এবং লাঙলের প্রার্থী থাকবে। কিছু আসন ‘ফিক্সিং’ করে জাতীয় পার্টিকে জিতিয়ে দেওয়া হবে। তবে জাপা প্রার্থীদের এ ব্যবস্থায় আস্থা নেই বলে জানানো হয়েছে।

আগের তিনবারের মতো সরাসরি আসন ছেড়ে নয়, ভিন্ন উপায়ে সমঝোতা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে জাপা সূত্র। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যেও একই আভাস মিলেছে। মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, জাতীয় পার্টির প্রত্যাশা নির্বাচন যেন নিরপেক্ষ হয়। এটাই ছিল বৈঠকের আলোচনা। আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা– প্রশ্নে তিনি বলেন, আসন নিয়ে আলোচনা হবে কেন? জাতীয় পার্টি তো সব আসনেই নির্বাচন করতে চায়। নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে।

আসন সমঝোতার কথা না বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘কীভাবে শান্তিপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী দিয়েছে। আমরা আমাদের প্রার্থী দিয়েছি। আমরা আমাদের নির্বাচন করব।’

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনে জাপা সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণ করবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

সূত্র জানায়, বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির বার্তা নিয়ে গণভবনে যান ওবায়দুল কাদের ও নানক। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন তারা।

পরে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের গুলশানের বাসভবনে বৈঠক করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। ছিলেন মুজিবুল হক চুন্নুও। রুহুল আমিন হাওলাদার সমকালকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে।

জাপা সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সরকারপ্রধান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। আওয়ামী লীগ কতটি আসন ছাড়বে বা ছাড় দেবে, তা জানা যায়নি। জাপা সূত্রের দাবি, ৩৫টি আসন চেয়ে ওবায়দুল কাদেরকে তালিকা দেওয়া হয়েছে।

আগামী সংসদেও প্রধান বিরোধী দল হতে মরিয়া জাপা কী প্রস্তাব দিয়েছে, তা জানায়নি। দলটির সূত্র জানিয়েছে, জাপা চায় তাদের ছেড়ে দেওয়া আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা ভোটে থাকতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ কিছু আসনে নৌকা সরাতে রাজি হলেও স্বতন্ত্রের ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে চায় না। পরাজয়ের শঙ্কা থাকায় এতে জাপা রাজি নয়। শর্ত পূরণে নিশ্চয়তা না পাওয়ায় সমঝোতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনছে না।

বুধবার দুপুরে ওবায়দুল কাদের আসন সমঝোতার আভাস দিয়ে বলেন, জাতীয় পার্টি এক সময় মহাজোটে ছিল। তারা নির্বাচন করছে। সুতরাং, আলোচনা হওয়ার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।
কিন্তু এর ঘণ্টাখানেক পর জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জোরের সঙ্গেই বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব পাননি।  বনানী কার্যালয়ে জাপা মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, আসন নিয়ে নয়; নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েই আলোচনা হবে। আসন নিয়ে কোনো প্রস্তাব পাইনি।

বৈঠকে গেলেও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বুধবার সন্ধ্যায় জানান, তিনি এমন কোনো বৈঠকে যাচ্ছেন না।

মঙ্গলবার রাতে খবর ছড়ায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ তিন নেতা। তবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শিগগির হতে পারে।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নেও ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছিল জাপা। ১৫ নভেম্বর তপশিল ঘোষণার এক সপ্তাহ পর দলটি ভোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। জাপা সূত্র জানিয়েছে, দলটিকে ফের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসানো এবং রওশন এরশাদের বদলে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতি পেয়ে নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে জাপা।

দলীয় সূত্রের খবর, এর প্রতিফলও দেখা গেছে ইতোমধ্যে। জাপার শর্ত মেনে সরকার রওশনকে সমর্থন করা বন্ধ করায় তিনি জি এম কাদেরের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ে টিকতে না পেরে নির্বাচন থেকেই ছিটকে পড়েছেন।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ ১০-১২টির বেশি ছাড়তে রাজি নয়।  কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় আসন ছাড়া হবে, তা নিশ্চিত নয়। সব আসনে নৌকার প্রার্থী থাকলেও ‘ফিক্সিং’ করে কিছু আসনে জাপাকে জেতানো হবে– ধারণা দেওয়া হয়েছে। নৌকা না থাকলে লড়তে হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এতেও জাপা প্রার্থীরা রাজি নন। ভোটের মাঠে দুর্বল এই নেতারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চান না। প্রতিপক্ষ হিসেবে চান নামসর্বস্ব দলের প্রার্থী।

জাপার শীর্ষ তিন নেতার একজন বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জাপার পক্ষে দুই-তিনটি আসন পাওয়াও কঠিন। আবার সমঝোতা করলে আন্তর্জাতিক মহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর কৌশল নিতে হচ্ছে। আসন সমঝোতা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে নির্বাচনে থেকে যাবেন জাপা প্রার্থীরা।

২০০৮ সালে জাপাকে ২৯ আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ছেড়েছিল ৪২ আসন। গতবার ছাড় দিয়েছিল ২৭ আসনে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.