কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

0
190
কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে তোলা হচ্ছে ট্রাক্টরে। গত শনিবার হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার আবদুল্লাহপুর এলাকায়

পরিবেশ আইন অমান্য করে হবিগঞ্জের বাহুবল, চুনারুঘাট ও নবীগঞ্জ উপজেলার কৃষিজমি ও টিলার উপরিভাগের মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমি ও টিলার মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ।

কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি গভীরের মাটিতেই মূল পুষ্টিগুণ থাকে। মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাবে না। এতে সারের পেছনে কৃষকের অতিরিক্ত খরচ করতে হবে।

জেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা আখতার বলেন, সাধারণত এক কানি জমিতে প্রায় ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হয়। কিন্তু টপ সয়েল কেটে নেওয়া জমিতে এর প্রায় দ্বিগুণ সার দিতে হবে। ফলনও স্বাভাবিকের চেয়ে কম হবে। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

গত শনিবার ও সোমবার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবল উপজেলার মিরপুর ও আবদুল্লাহপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি ইটভাটা। আবদুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কৃষিজমি থেকে খননযন্ত্রের সাহায্যে মাটি উত্তোলন চলে। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না।

ওই এলাকার এশিয়া ব্রিকসের মালিক রুবেল মিয়া বলেন, তিনি জানেন কৃষিজমি থেকে মাটি নিয়ে ইট প্রস্তুত করার কোনো নিয়ম নেই। তবে সরকার যেসব জায়গা থেকে মাটি নেওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছে, সেখান থেকে মাটি আনলে তাঁদের অনেক অসুবিধা। খরচও বেশি হয়। যে কারণে কৃষিজমির মাটির ওপর তাঁদের নির্ভর করতে হয়।

আবদুল্লাহপুর গ্রামের কৃষক মিনহাজ উদ্দিন (৫৫) বলেন, এলাকার কৃষিজমিগুলো এক ফসলি। যে কারণে কৃষকেরা অনেক সময় জমির মাটি বিক্রি করে দেন। মাটির মূল্য একেক জায়গায় একেক রকম হয়। তিনি সম্প্রতি ২৮ শতক জমির মাটি বিক্রি করে আট হাজার টাকা পেয়েছেন। হবিগঞ্জ-চুনারুঘাট আঞ্চলিক সড়কের চানভাঙ্গা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে। সোনাহর মিয়া বলেন, কয়েক বছরে অসংখ্য ইটভাটা গড়ে ওঠায় কৃষিজমি এখন হুমকিতে পড়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া এলাকায় চার-পাঁচজন শ্রমিক একটি টিলা থেকে মাটি কাটছিলেন। তাঁরা বলেন, তাঁরা জমির মালিকের নির্দেশে মাটি কাটছেন। এ কাজে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পান। ট্রাক ভর্তি করে এই মাটি এম এম নামে একটি ব্রিক ফিল্ডে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে জমির মালিককে সেখানে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে এম এম ব্রিক ফিল্ডের মালিক মো. সিদ্দিক বলেন, ‘এলাকার জমির মালিকদের কাছ থেকে আমরা ঘনফুট হিসেবে মাটি কিনি। এটা বৈধ না অবৈধ আমার জানা নেই।’

পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ), ২০১৩ অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও নিষিদ্ধ রয়েছে। দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনগুলো প্রয়োগ করবেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পেলে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.