কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন

0
138
প্রথম কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা আইন

চ্যাটজিপিটির জেনারেটিভ এআই বা সৃজনভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সব টুল রীতিমতো পুরো বিশ্বকে উল্টেপাল্টে দিচ্ছে। দেশে দেশে চলছে একে নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের নানা কৌশল। ইউরোপীয় ডেটা প্রটেকশন বোর্ড চলতি বছরের এপ্রিলে চ্যাটজিপিটির জন্য টাস্কফোর্স গঠন করে।

ইতালি মার্চে চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করে। কিন্তু পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। স্পেনও চ্যাটজিপিটি সীমা লঙ্ঘন করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সব টুল নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়ার সরকার সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছে। তারা তাদের প্রধান সায়েন্স অ্যাডভাইজরি বডির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। আয়ারল্যান্ডও তাদের দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছে।

ব্রিটেনের বাজার প্রতিযোগিতার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, অচিরেই তারা গ্রাহক, ব্যবসা ও অর্থনীতির ওপর এআইর প্রভাব খতিয়ে দেখবে। আর সিদ্ধান্ত নেবে কোনো নতুন আইনের প্রয়োজন আছে কিনা। এপ্রিল মাসে চীনের সাইবার স্পেস নিয়ন্ত্রক জেনারেটিভ এআই নিয়ে তাদের খসড়া ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ উপস্থাপন করেছে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তাদের এআই সেবা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার আগে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, তা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছে।

জাপানে গ্রুপ অব সেভেন বা জি৭ দেশগুলোর বৈঠকে প্রযুক্তিমন্ত্রীরা একমত হয়েছেন, এআইর ঝুঁকি-সংক্রান্ত সাধারণ আইন তৈরি করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন বলছে, তারা বিদ্যমান আইনেই নিয়ন্ত্রণ জোরদার করবে। ২৭ এপ্রিল সিনেটর মাইকেল বেনেট এআই নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স গঠনে নতুন বিল উত্থাপন করেন। বাইডেন প্রশাসন এখন জনমত যাচাই করছে। তবে এসব দেশ বা জোট থেকে এআই আইন প্রণয়নে অনেকখানি এগিয়ে গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাক্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণে আইনের খসড়া তৈরি করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। আইনের মূলে রয়েছে কপিরাইট নিয়ন্ত্রণ।

বাহ্যিক চেহারা শনাক্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে ৩৬ ঘণ্টার বেশি সময় বিতর্কের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য দেশ উল্লিখিত আইনে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। বিশ্বে এটিই হবে প্রথম এআই নিয়ন্ত্রক আইন। নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে চ্যাটজিপিটি ও সরকারের বায়োমেট্রিক নজরদারিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মতো বিষয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মতে, নতুন চুক্তিটি বিশ্বের প্রথম এআই আইন হিসেবে নজির স্থাপন করেছে। এমন আইন প্রথম বাস্তবে প্রয়োগ করা অঞ্চল হতে চায় ইইউ।

ইইউ কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, ঐতিহাসিক! ইইউ প্রথম অঞ্চল হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য সুস্পষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন শুধু নিয়মের সংকলন নয়; বরং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্টার্টআপ ও গবেষকদের জন্য সারাবিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য লঞ্চ প্যাড হিসেবে কাজ করবে।

স্পেনের ডিজিটালাইজেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক মন্ত্রী কারমে আর্টিগাস বলেন, এটি ঐতিহাসিক অর্জন। ভবিষ্যতের জন্য বিশাল মাইলফলক! চুক্তি কার্যকরভাবে সমাজ ও অর্থনীতির ভবিষ্যতের জন্য জরুরি। সারাবিশ্বে দ্রুত বিকশিত প্রযুক্তিগত পরিবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা ভূমিকা রাখবে। উল্লিখিত প্রচেষ্টায় সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখেছি; যা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার পুরোপুরি সুরক্ষিত রাখার সঙ্গে ইউরোপজুড়ে উদ্ভাবন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশকে বিস্তৃত করবে।

শাহেরীন আরাফাত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.