কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল হাবিব ওরফে দুলুর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার প্রতিবাদে আজ শনিবার এক সমাবেশের আয়োজন করেন নেতা-কর্মীরা। সে সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। একপর্যায়ে বিএনপির এক মিছিলে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা করেন। এর জেরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন।
উপজেলা সদরের তিনকোনা মোড়ে আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মহিলা কলেজসংলগ্ন কদমতলা মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করেন। তবে আওয়ামী লীগের কোনো পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি না থাকলেও দলীয় নেতা-কর্মীরা ঘটনার পর তিনকোনা মোড়ে সমাবেশ করেন।
দুই দলের নেতা-কর্মী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিবের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এর প্রতিবাদে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আজ বিকেলে উপজেলার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে সমাবেশের আয়োজন করেন। নেতা-কর্মীরা বেলা তিনটা থেকে মহিলা ডিগ্রি কলেজ কদমতলা মোড়, কাছারি মাঠ, ফুলবাড়ী উচ্চবালিকা বিদ্যালয় ও তিনকোনা মোড়ে সমবেত হতে থাকেন।
এ সময় বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মীর হাতে বাঁশ ও লাঠিসোঁটা দেখা যায়। সে খবর পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী পোদ্দার সেখানে গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান।
কিন্তু বিএনপির সমাবেশস্থলে আওয়ামী লীগ নেতা আহাম্মদ আলী পোদ্দারকে দেখে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী ক্ষিপ্ত হন। তাঁদের একটি অংশ লাঠিসোঁটা হাতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় তাদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। খবর পেয়ে সমাবেশস্থল থেকে বিএনপির অন্য নেতা-কর্মীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে সদরের তিনকোনা মোড়ে আসেন। তখন ছাত্রলীগের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে।
সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল পোদ্দার, লোকমান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক তাহাদ হাসান, বায়জিদ বোস্তামীসহ ৮–১০ জন আহত হন। অন্যদিকে বিএনপির উপজেলা সহসভাপতি লোকমান হোসেন সরকার, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম রেজা, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা, তোতা মিয়াসহ ১০–১২ জন আহত হন। পরে পুলিশ এসে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে উপজেলার মহিলা কলেজসংলগ্ন কদমতলা মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করেন। এ সময় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান মুকুল বলেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালান। এতে ১০–১২ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানান তিনি।
এদিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তিনকোনা মোড়ে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। যদিও তাঁদের পূর্বনির্ধারিত কোনো কর্মসূচি ছিল না বলে জানা গেছে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী পোদ্দার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তৌকির হাসান তমাল বক্তব্য দেন। আহাম্মদ আলী বলেন, তিনি নিজেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। তারপরও বিএনপির লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের লোকজনের ওপর হামলা চালান।
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব জানান, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। কেউ শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা করলে তা দমন করা হবে।