কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা

0
134
বাদল রহমান কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ছিলেন

কিশোরগঞ্জ শহরের একটি পুকুর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা বাদল রহমানের (৬২) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা করেছেন তাঁর ভাই আসিফুর রহমান। গতকাল সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন তিনি। মামলা হওয়ার তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ।

তবে জেলা শহরের আলোচিত এ ঘটনার দুই দিন পার হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকি ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন বা কোনো ক্লু এখনো পায়নি পুলিশ। ওসি মোহাম্মদ দাউদ আজ মঙ্গলবার সকালে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।

কিশোরগঞ্জে পুকুর থেকে আওয়ামী লীগ নেতার লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

বাদল রহমানের বড় ভাই আতাউর রহমান বলেন, তাঁর সাঁতার জানা ভাই পুকুরে কেন ডুবে মরল? আর এই পুকুরেই বা বাদল কেন আসবেন? কারণ, এ রাস্তায় বাদলের চলাফেরা কম ছিল। তিনি বলেন, ‘গত শনিবার রাতেও আমার ভাইকে এ রাস্তায় কেউ দেখেননি। তাঁকে হত্যা করে পুকুরে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে।’

গত রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে জেলা শহরের চর শোলাকিয়া ব্যাপারীবাড়ি মোড়ের পুকুর থেকে বাদল রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আইনজীবী মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বাদল রহমান জেলা আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এ ছাড়া সামাজিকভাবেও তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁর এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে সবাই ব্যথিত। কিন্তু এমন একটা ঘটনা এটা বোঝাও যাচ্ছে না, আসলে তিনি কীভাবে মারা গেলেন। সে জন্য তাঁদের দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিও দিতে পারছেন না। তবে মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তাঁরা থানা-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীকে তাগাদা দিয়েছেন।

বাদল রহমান কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের ধিরুয়াইল গ্রামের মৃত মুখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি কিশোরগঞ্জ শহরের নীলগঞ্জ সড়কের খড়মপট্টি এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। তাঁর দুই ছেলে শহরের উকিলপাড়া এলাকায় আরেকটি বাসায় থাকেন। প্রায় দুই বছর আগে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর এ বছরের মে মাসের শুরুতে ঢাকার বাসিন্দা আয়েশা আহমেদ নামের আরেক নারীকে বিয়ে করেন বাদল।

আয়েশা আহমেদ জানান, রোববার রাত আটটার দিকে নাশতা করার পর রাতের খাবার রান্নার জন্য বলে বাসা থেকে বের হন বাদল। রাত সাড়ে ১০টার দিকেও ফিরে না আসায় স্বামীকে ফোন দেন তিনি। মুঠোফোন নম্বরে কল ঢুকলেও তিনি ধরেননি। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আরেকবার ফোন দিয়ে ফোন বন্ধ পান তিনি। পরে সকালে পুকুরে লাশ ভাসার খবর পান। স্ত্রী আরও বলেন, রাতে ফিরে না আসায় তিনি ভেবেছিলেন, তাঁর স্বামী হয়তো ছেলেদের বাসায় গিয়েছেন। সকালে ফিরে আসবেন। তিনি কখন কোথায় যেতেন বলে যেতেন না। অনেক সময় গভীর রাতে বাসায় ফিরতেন। আবার অন্য জায়গায় থেকেও যেতেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, সিসিটিভি ফুটেজে সবশেষ শনিবার রাত ৯টা ১৬ মিনিটে বাদল রহমানকে শোলাকিয়া কানিকাটা এলাকার দিকে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। আরও সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। লাশ উদ্ধারের সময় বাদল রহমানের পকেটে চশমা, মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পাওয়া গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.