গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বিক্ষোভের সময় কারারক্ষীদের জিম্মি করে ২০৯ জন বন্দী পালিয়ে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই বন্দী পালানো ঠেকাতে গুলি ছুড়েছেন কারারক্ষীরা। এতে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৩ জন জঙ্গি রয়েছেন বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কিছু বন্দী কয়েকজন কারারক্ষীকে জিম্মি করে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। কারারক্ষীরা তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বেলা দেড়টার দিকে সেনাসদস্যরা কারাগারে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বিক্ষোভের খবর পেয়ে ফটকে অবস্থান নেন বন্দীদের স্বজনেরা। একপর্যায়ে কারাগারের বাইরে একটি ঝুটের গুদামে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে সেনাসদস্যরা তাঁদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে কারাগারে জঙ্গি ও কিছু সাধারণ বন্দীরা মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ শুরু করেন। এ সময় অনেক বন্দী ভেতরে থাকা মই ব্যবহার করে ও দেয়াল ভেঙে যে যেভাবে পেরেছেন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারারক্ষীরা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। খবর দেওয়া হলে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে সেনাবাহিনীর কয়েকটি দল কারাগারে পৌঁছায়। পরে কারারক্ষীরা নিরাপত্তার স্বার্থে গুলি ছোড়েন। গুলিতে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২০৯ জন বন্দী পালিয়ে গেছেন।
নিহতদের লাশ রাতে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত ছয়জন হলেন, হত্যা মামলার আসামি মৌলভীবাজারের রামেশ্বপুরের মকবুল মিয়ার ছেলে ইমতিয়াজ পাভেল (২৪), ছিনতাই মামলার আসামি টাঙ্গাইলের তারটিয়া এলাকার রাজ্জাক শেখের ছেলে স্বপন শেখ (৪০) ও সুনামগঞ্জের জলোশা এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আয়াতুল্লাহ (৩৯)। হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার মামলার আসামি নরসিংদীর নলভাটা এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে মো. জিন্নাহ (২৮) ও নওগাঁর কাঞ্চনপুর এলাকার আবদুস সালামের ছেলে আসলাম হোসেন মোহন। অন্যজন হলেন হলি আর্টিজান মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আফজাল হোসেন (৬৩)।
কারাগারের সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, বুধবার সকাল থেকে কাশিমপুর কারাগারে অতিরিক্ত সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দীরা কারাগার থেকে যে যেভাবে পারছেন, পালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ দেয়াল টপকে, কেউ মই বেয়ে বাইরে বের হয়ে যাচ্ছেন। এ সময় একটি ভবনে কিছু বন্দীকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতেও দেখা গেছে।