রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ও মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে সিটি করপোরেশন। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবন মিলনায়তনে ওই সভায় ব্যবসায়ীরা কারওয়ান বাজার না ছাড়ার বিষয়ে তাঁদের কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন। সরানোর চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনে আত্মাহুতিরও হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
মতবিনিময় সভার শেষে সভাপতির বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। কারওয়ান বাজারের ঝুঁকি, স্থানান্তরের যৌক্তিকতা এবং এর ফলে ব্যবসায়ীরা যেসব সুবিধা পাবেন, সেগুলো তুলে ধরেন তিনি। তখন মিলনায়তনের যে অংশে আড়ত ও মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বসা ছিলেন, সেদিক থেকে উচ্চ স্বরে বলতে শোনা যায়, তাঁরা কারওয়ান বাজারেই থাকবেন। দুর্ঘটনা কিংবা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও থাকবেন। এমনকি দুর্ঘটনার দায়ও নেবেন।
মেয়রের বক্তব্য চলাকালে অন্তত তিন দফায় ব্যবসায়ীরা এভাবে উচ্চ স্বরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান জানান দেন। এ সময় মেয়র আতিকুল ইসলামকে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে ব্যবসায়ীদের শান্ত করে আবার বক্তব্য শুরু করতে দেখা যায়।
বাজার স্থানান্তরের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আতিকুল ইসলাম বলেন, মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ লিখে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছিল। সেটা লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। এই মার্কেট যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তখন এর দায়িত্ব কে নেবে? ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শহরের ভেতরে কি পাইকারি বাজার হতে পারে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন যদি শহরের ভেতরে আর ট্রাক ঢুকতে দেওয়া না হয়, তখন তো ব্যবসায়ীদেরই সমস্যা হবে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন যে মার্কেট করে দিচ্ছে, তা কারওয়ান বাজারের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ভালো হবে। মেয়রকে তখন কথা বলতে না দিয়ে ব্যবসায়ীরা বলতে থাকেন, যাত্রাবাড়ীতে যাবেন না। কোথাও যাবেন না। এখানেই থাকবেন।
এই পর্যায়ে মেয়র বলেন, ‘কারওয়ান বাজার মার্কেট যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এই দায়িত্ব তখন আপনাদেরই নিতে হবে।’ তখন ব্যবসায়ীদের দিক থেকে উচ্চ স্বরে জবাব আসে, দায়িত্ব নিলাম, আমরা দায়িত্ব নিলাম। ভাঙলে সব দায়িত্ব আমাদের।
এরপরই আবার কয়েকজন ব্যবসায়ী দাঁড়িয়ে এই পরিস্থিতির জন্য মেয়রকে দায়ী করে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। তাঁরা যুক্তি দিয়ে বলেন, প্রায় এক দশক আগে মার্কেট সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেটা করা হয়নি। আর এখন বলা হচ্ছে, মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।
এভাবে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সভা শেষ হয়। মেয়র বক্তব্য শেষ করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। ওই কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাওয়ান বাজার থেকে মার্কেট স্থানান্তরের জন্য করণীয় নিয়ে সিটি করপোরেশনকে প্রতিবেদন জমা দেবে।
এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে অবশ্য বক্তব্য দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রকৌশলীরা এই বাজারের কয়েকটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে, ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। পাশ দিয়ে মেট্রোরেল হচ্ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। একসময় হয়তো কারওয়ান বাজারে ট্রাক আসবে না। ব্যবসায়ীদের এটি আগে থেকেই বিবেচনা করতে হবে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখেই এখান থেকে বাজার সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আর তাজুল ইসলাম বলেন, মার্কেট স্থানান্তরের সঙ্গে অনেকের জীবন–জীবিকার বিষয় জড়িত। কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশেই উন্নয়নকাজে ধ্বংস ও নির্মাণ হয়েছে। তবে কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিন্তা না করে একপক্ষ হিসেবে চিন্তা করতে হবে।
ডিএনসিসির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা ছাড়াও কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল বাশার, ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক, কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির (পাকা) আড়ত ভবনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান চৌধুরী, ১ নম্বর ভবন সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, কিচেন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন এবং ২ নম্বর সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।