কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় পদ্মার চরের চারটি জায়গা থেকে মিলন হোসেন (২৭) নামের এক যুবকের লাশের ৯ টুকরা উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন নিহত মিলন হোসেনের মা শেফালি খাতুন। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাতনামা কতজনকে আসামি করা হয়েছে, সেটাও উল্লেখ করা হয়নি।
এ ঘটনায় এর আগে আটক ছাত্রলীগ নেতাসহ পাঁচজনকে আজ রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তবে গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরেকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আজ বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) সাজু মহন সাহা বলেন, আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। তারপর গ্রেপ্তার দেখানো হবে। ঘটনার সঙ্গে আরও যাঁরা জড়িত, তাঁদের ধরতে অভিযান চলছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মিলনের লাশ দাফনের পর তাঁর পরিবারের কয়েক সদস্য থানায় আসেন। নিহত মিলন হোসেনের মা শেফালি খাতুন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলা করার সময় মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুন, দুলাভাই আশরাফুল ইসলামসহ গ্রামের আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বিষয়ে জানতে বাদী শেফালি খাতুন ও মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুনের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তাঁরা ধরেননি। তবে নিহত মিলনের দুলাভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, থানায় গিয়ে ওসির কক্ষের বাইরে ছিলেন তিনি। তাঁর শাশুড়ি ও মিলনের স্ত্রী ওসির কক্ষে ঢুকেছিলেন। মামলায় আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পদ্মার চরে অভিযান চালিয়ে মিলন হোসেনের লাশের টুকরাগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বাহিরমাদি গ্রামের মাওলা বক্স সরদারের ছেলে। তিনি স্ত্রী মিমি খাতুনকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই ব্লকে ভাড়া বাসায় থাকতেন। টেক্সটাইল প্রকৌশলে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতেন। গত বুধবার সকালে এস কে সজীব নামের এক যুবকের ফোন পেয়ে তিনি শহরের ভাড়া বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। ওই দিন সন্ধ্যায় মিলনের স্ত্রী কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ঘটনার বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ জানিয়েছিলেন, চাঁদার দাবিতে মিলন হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। জড়িত কয়েকজনকে আটকের পর তাঁদের দেখানো জায়গা থেকে লাশের ৯টি টুকরা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই একে অপরের পরিচিত। মিলন বাড়ি থেকে অনলাইনে কাজ করতেন। নিখোঁজের দিন তাঁকে মুঠোফোনে ডেকে হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ওই রাতে তাঁকে হত্যা করা হয়। এরপর গুম করার সুবিধার্থে ধারালো অস্ত্র দিয়ে লাশটি টুকরা টুকরা করা হয়। চারটি মোটরসাইকেলে সাতজন সাতটি পলিথিন ব্যাগের ভেতর লাশের ৯টি টুকরা নিয়ে বের হন। নদীর পাড় থেকে হেঁটে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে পদ্মার মধ্যে বালুর ভেতর চারটি স্থানে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন তাঁরা। এই পুরো হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এস কে সজীব।