কানাডায় আগের স্বামীর কাছে ইভা, সৌরভকে বাসায় ডেকে ৪ টুকরো

0
78
ওমর ফারুক সৌরভ (২৩) হত্যার ঘটনা
ময়মনসিংহে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ওমর ফারুক সৌরভ (২৩) হত্যার ঘটনায় চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। সৌরভের আগে কানাডা প্রবাসী আব্রাহাম নামে একজনের সঙ্গে বিয়ে হয় ইভার। বর্তমানে তিনি কানাডায় আছেন।
 
মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইলিয়াসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
 
সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, ‘তিন বছর আগে আব্রাহাম নামের কানাডা প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয় ইভার। এরপরও সৌরভের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন তিনি। গত ১২ মে গোপনে বিয়েও করেন তারা। তবে পরিবার না মানায় প্রথম স্বামী আব্রাহামের কাছে কানাডায় চলে যান ইভা। বর্তমানে তিনি কানাডায় আগের স্বামীর সঙ্গে রয়েছেন।
 
এদিকে, ইভাকে খুঁজতে গত ১ জুন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে সৌরভের আসার বিষয়টি ইলিয়াসকে জানায় তার ছেলে মৃদুল। পরে সৌরভকে সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ শহরের গোয়াইলকান্দি এলাকায় বাসায় ডেকে আনেন চাচা ইলিয়াস। একপর্যায়ে তার হাত-পা বেঁধে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। এরপর শহরের গাঙ্গিনারপাড় থেকে পলিথিন ব্যাগ ও একটি লাগেজ কেনা হয় । বাসায় ফিরে চাপাতি দিয়ে মরদেহ টুকরো টুকরো করে ভরা হয় লাগেজে। ঘণ্টা দুয়েক পর মরদেহের ট্রকরোগুলো একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকারে তোলা হয় । উদ্দেশ্য ছিল সেগুলো যমুনা নদীতে ফেলে দেওয়ার। তবে তা সম্ভব হয়নি।
 
গত ২ জুন সকালে ময়মনসিংহ সদরের সীমান্তবর্তী মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে সৌরভের চার টুকরো করা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কালো রঙের একটি ট্রলিব্যাগ থেকে তিন টুকরো এবং পাশেই একটি বাজারের ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মাথা উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ৩ জুন রাতে গ্রামের বাড়িতে ওমর ফারুকের মরদেহ দাফন করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী বাদী হয়ে ২ জুন রাতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
 
এ বিষয়ে সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘যে ভাইকে বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছি, সে-ই আমার সন্তানকে হত্যা করল! আমার সন্তানকে না মেরে আমাকে মারত। তার কী এমন দোষ ছিল? শুধু কি আমার ছেলেই তোর (ইলিয়াস) মেয়েকে ভালোবেসেছে? তোর মেয়ে কি ভালোবাসে নাই? যদি তোর মেয়ে ভালো নাই বাসত, তাহলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় গিয়ে কেন আমার ছেলেকে বিয়ে করল? সৌরভের বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে আমার ছোট ভাই আমাকে নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছে। আমি এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত সবার ফাঁসি চাই।’
 
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সৌরভের মা মাহমুদা আক্তার। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ভালোবেসে চাচাতো বোনকে বিয়ে করাই আমার ছেলের কাল হয়েছে। আমরা কোনোদিন ভাবিনি, আপন চাচা তার ভাতিজাকে এভাবে হত্যা করবে! এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আমার সাজানো সংসার ছিল। ইলিয়াস সবকিছু এলোমেলো করে দিল।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.