কাঁচাবাজারে কাঁচা লঙ্কা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড

0
186
মেহেরপুরে জিয়া মরিচ। সর্বাধিক ব্যবহৃত দেশি জাতের এই মরিচের ঝাল বেশ

বঙ্গদেশে মরিচ এসেছে পর্তুগিজদের হাত ধরে। এর আগে গোলমরিচ, আদার ঝালে এই অঞ্চলের মানুষের রসনা মিটত।

কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমলেও এখনো ‘ট্রিপল সেঞ্চুরিতে’ অপরাজিত। উঠেছিল ৭০০ টাকায়। ক্রিকেটে টি–টোয়েন্টির তেড়েফুঁড়ে ব্যাটিং বললেও কম বলা হবে। দামের ওঠা–নামার বয়ান দিতে গিয়ে অনেকে বলছেন, এ যেন রোলার কোস্টার।

আমদানির দুয়ার উদাম করেও তার গতির রাস টানা যাচ্ছে না। পবিত্র রমজানে কাঁচা মরিচের উল্লম্ফন অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু এই অসময়ে কাঁচা লঙ্কা কাঁচাবাজারে যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে, তা হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছেন বঙ্গবাসী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে কাঁচা মরিচের বার্ষিক চাহিদা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। দৈনিক জনপ্রতি চাহিদা ৭ দশমিক ১৯ গ্রাম। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ হয়, উৎপাদিত হয়েছে ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। ঘাটতি প্রায় ৫০ হাজার টন।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে মরিচের আবাদ ও উৎপাদন কিছুটা কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করে ফলন পাওয়া যায় ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। সেবার চাহিদা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কমতে কমতে গত অর্থবছরে ৫০ হাজার টনের মতো ঘাটতি হয়েছে।

দামের তেজ কমাতে সরকার গত ২৫ জুন প্রাথমিকভাবে ১৭ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমোদন দেয়। আমদানিও হচ্ছে। তাতেও দামের পারদ নামছে না।

মরিচের যত জাত

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, দেশে প্রায় ২০ জাতের মরিচ চাষ হয়। বোম্বাই বা কামরাঙ্গা মরিচের ঝাল সবচেয়ে বেশি। তবে ব্যবহার সীমিত। সর্বাধিক ব্যবহৃত দেশি জাতের ‘জিয়া’ মরিচের ঝাল বেশ। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, বরুড়া, ডিজিট বাজার, মেহেরপুর, গাংনী, সারবাটি—এসব এলাকায় এই জাতের মরিচ বেশি চাষ হয়। এই মরিচ আকারে ছোট। এসব এলাকায় ‘জিয়া’ অর্থ ছোট। ছোট হলেও যেমন ঝাল, তেমনি এর ফলন।

মরিচের অন্যবিধ ব্যবহারও যথেষ্ট। অস্ত্র হিসেবেও রয়েছে এর ব্যবহার। অধুনা ‘হাতবোমা’ হিসেবে মরিচ ব্যবহৃত হচ্ছে। তা ছাড়া জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে মরিচের গুঁড়ার প্রয়োগ রয়েছে। পুলিশ ‘পিপার স্প্রে’ নামের একধরনের অস্ত্র প্রয়োগ করে রাজপথের মিছিল বা বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে থাকে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কেউ কেউ, কোনো ক্ষেত্রে নারীরা সঙ্গে পিপার স্প্রের বোতল রাখেন। নির্যাতন করতে মরিচগোলা পানিরও প্রচলন আছে।

অন্যান্য চালু জাতের মধ্যে আছে হাইব্রিড, বারি মরিচ-১ ও ২, মনসাগর্জন, বগুড়া সিটি, বোম্বাই, বিজলি প্লাস, থাই, পাটনাই, সূর্যমুখী, অগ্নি, মোহনা, মেজর, প্রিমিয়াম, যমুনা, দেবগিরি, শাকাটা, পিনিক, বিন্দু ইত্যাদি। রবি ও খরিফ—দুই মৌসুমে দেশে মরিচের চাষ হয়।

মরিচের চাষ কমবেশি সারা দেশেই হয়। বাড়ির আঙিনায় ও উঠানের কোণে মরিচের গাছ লাগানোর চলও অনেক দিনের। অনেকে এখন টবে মরিচ চাষ করেন। তবে বগুড়া, পঞ্চগড়, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, কুমিল্লা, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ—এসব এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে মরিচের বেশি চাষ হয়।

নাম নিয়ে যত কথা

মরিচের জন্মস্থান সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপারে আমেরিকা মহাদেশে। অনেক গবেষকের মতে, মরিচের আদি নিবাস ইকুয়েডর বা মেক্সিকোয়। প্রায় সাড়ে সাত হাজার বছর ধরে আমেরিকার আদিবাসীরা মরিচ ব্যবহার করছেন। পুরাতাত্ত্বিকেরা ইকুয়েডরে ছয় হাজার বছর আগে মরিচ চাষের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন। সে তুলনায় বাঙালির মরিচ খাওয়ার বয়স বলতে গেলে শিশুপর্যায়ে। বড়জোর চার শ বছর।

ক্রিস্টোফার কলম্বাস গোলমরিচ আর সুগন্ধি মসলার সন্ধানেই ভারতে সওদাগরি জাহাজ নিয়ে সমুদ্রযাত্রা করেছিলেন। তিনি ভারতের সন্ধান পেলেন না, গোলমরিচও পেলেন না। পেলেন আমেরিকা আর কাঁচা মরিচ। গোলমরিচের মতো ঝাল–স্বাদ বলে এর নাম দিলেন ‌‘পিপার’।

এশিয়াটি সোসাইটি থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ–এর দশম খণ্ডে মরিচের উদ্ভিদতাত্ত্বিক বর্ণনা রয়েছে। এটি বহুবর্ষজীবী বিরুৎ বা ছোট গুল্মশ্রেণির সপুষ্পক উদ্ভিদ। প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর ফুল উভলিঙ্গ। ফলটি সাধারণত কাঁচায় উজ্জ্বল সবুজ, (কালো, হলুদ, বেগুনি, সাদাসহ বিভিন্ন রঙেও এখন হাইব্রিড জাত পাওয়া যায়) পাকলে কমলা বা লাল টুকটুকে। মরিচের মধ্যে আছে রাসায়নিক উপাদান ক্যাপসাইসিন, যা ত্বক বা দেহকলার সংস্পর্শে এলে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এটিই মরিচের ঝালের উৎস।

প্রাচীন ও মধ্যযুগে ঝালের মরিচ বা লঙ্কার ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায় না। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা
ভাষার অভিধান’-এ ‘মরিচ’ নেই। থাকার কথাও নয়। কারণ, বাংলা তথা ভারতবর্ষ তখনো মরিচের দেখা পায়নি।

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’–এ মরিচের দেখা পাওয়া যাচ্ছে ‘গোলমরিচ’,‘চই মরিচ’ হিসেবে। তবে তিনি ‘লঙ্কা’ অর্থে মরিচকে স্থান দিয়েছেন ৬ নম্বরে। একে বলেছেন ‘গাছ মরিচ’। অবশ্য মরিচ ‘লঙ্কা’ হলো কীভাবে তার বিবরণ হরিচরণে নেই। এমনকি বাংলা একাডেমির ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে’ও নেই। ঝাল স্বাদের এই ফল শ্রীলঙ্কা থেকে আমাদের এখানে আসেনি, তার আদি নিবাসও শ্রীলঙ্কা নয়। তবু মরিচ কেমন করে লঙ্কা হলো, তা অজ্ঞাত। আর ‘লঙ্কাকাণ্ড’ বলে বাংলায় যে বাগ্‌ধারাটি প্রচলিত, তার সঙ্গেও মরিচের কোনো সম্পর্ক নেই।

আক্ষরিক অর্থে ‘লঙ্কাকাণ্ড’ রামায়ণের একটি পর্ব। বাগ্‌ধারাটির অর্থ বিবাদ, হানাহানি, হুলস্থূল বাধানো। রামায়ণে রামভক্ত হনুমান তার লেজের আগুনে শ্রীলঙ্কায় হুলস্থূল ঘটিয়েছিল। সেই সূত্রেই লঙ্কাকাণ্ড বাগ্‌ধারাটির প্রচলন। তবে কাঁচা মরিচ এখন বাংলার বাজারে যে কাণ্ড ঘটাচ্ছে, তাকে লঙ্কাকাণ্ড বলাই যথার্থ।

মরিচপূর্ব কাল

মরিচ বাংলায় এসেছে শ চারেক বছর আগে। তাহলে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধ্বজাধারী বাঙালি ব্যঞ্জন কি তবে ঝালমুক্ত ছিল! আসলে তা নয়। ঝোলে-ঝালে অভ্যস্ত বাঙালির রান্নাঘরের ইতিহাসকে ঝালের নিরিখে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা চলে। ‌‌‘মরিচ–পূর্ব কাল’ এবং ‘মরিচ–উত্তর কাল’। পূর্বকালে ঝালের প্রধান উৎস ছিল গোলমরিচ। বহু সহস্র বছর ধরে এর চাষাবাদ চলছে দক্ষিণ ভারতে।

গোলমরিচের ঝালের উৎস ‘পাইপারিন’ নামের একধরনের রাসায়নিক উপাদান। এ জন্য একে ইংরেজিতে বলে ব্ল্যাক পিপার। তবে গোলমরিচই ঝালের একমাত্র উৎস নয়। বাঙালির রান্নাঘরে ঝালের অন্তত আরও তিনটি উৎস ছিল। এর একটি আদা।

অন্য দুটির একটিকে এখন নানাভাবে চালুর চেষ্টা চলছে। সেটি হলো ‌‘চই’। ‘চই মরিচ’ বা ‘চুই ঝাল’ নামের এই লতানো উদ্ভিদ একসময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গলে জন্মাত। এখন খুলনা ও বাগেরহাটে কিছু কিছু পাওয়া যায়। এই অঞ্চলের রান্নার রেসিপিতে চুই ঝালের কিছু ব্যবহার এখনো চালু আছে।

ঝালের তৃতীয় উৎস পিপুল প্রায় বিলুপ্ত। এখন আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসায় ওষুধের উপকরণ ছাড়া রান্নায় পিপুলের ব্যবহার নেই বললেই চলে।

বাঙালির খাবারের যেসব প্রসিদ্ধ বিবরণ মধ্যযুগের সাহিত্যে রয়েছে, তাতে ঝালের উপাদান কী ছিল, সেদিকে এবার একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে যে মহাভোজের বিবরণ দিয়েছেন, তাতে কী দিয়ে কী রান্না হয়েছিল, তার বয়ান আছে। মুকুন্দরাম লিখেছেন—‘কটু তেলে রান্ধে রামা চিতলের কোল/রুহিতে কুমুড়া বড়ি আলু দিয়া ঝোল/কটু তেলে কই মৎস্য ভাজে গণ্ডা দশ/মুঠি নিঙারিয়া তথি দিলা আদারস।’

ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর অন্নদামঙ্গল কাব্যে ভবানন্দের স্ত্রী পদ্মমুখী ব্রাহ্মণ ভোজনে যে চর্ব্যচূষ্যলেহ্যপেয় বিপুল ব্যঞ্জন রন্ধন করেছিলেন, তাতে বড়ি সহযোগে আড় মাছের ঝোল রান্না হয়েছিল—‘আড়ি রান্ধে আদারসে দিয়া ফুলবড়ি।’

দ্বিজ বংশীদাস মনসামঙ্গলে হরিণের মাংস রান্নায় লবঙ্গ এবং মাছ রান্নায় আদারসের উল্লেখ করেছেন—‘ধনিয়া সলুপা বাটি দারচিনি যত/মৃগমাংস ঘৃত দিয়া ভাজিলেক কত/বেত আগ পলিয়া চুঁচরা মৎস্য দিয়া/শক্ত ব্যঞ্জন রান্ধে আদা বাটিয়া।’

মরিচ–উত্তর কাল

কলম্বাস ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কার করে ফিরে বাকি বিশ্বের সঙ্গে কেবল অজানা সেই মহাদেশেরই পরিচয় করিয়ে দেননি; এমন দুটি উদ্ভিদের সঙ্গেও মোলাকাত করিয়ে দিয়েছিলেন, যা এখন পুরো ধরাধামে ছড়িয়ে আছে। এর একটি হলো তামাক, অন্যটি মরিচ।

কলম্বাস প্রচুর তামাক ও মরিচ নিয়ে পর্তুগালে ফিরেছিলেন। তাঁর দ্বিতীয়বার আমেরিকা অভিযানের সময় ১৪৯৩ সালে দিয়েগো আলভারেজ নামের এক চিকিৎসক স্পেনে মরিচের বীজ নিয়ে যান। কালক্রমে স্পেনের ব্যবসায়ীরা মেক্সিকো থেকে মরিচ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নিয়ে আসেন। কলম্বাস ব্যর্থ হলেও আরেক বিখ্যাত পর্তুগিজ অভিযাত্রী ভাস্কো দা গামা দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল ঘুরে ঠিকই ১৪৯৮ সালে ভারতবর্ষের পথ আবিষ্কার করে ফেলেন।

পর্তুগিজদের হাত ধরেই আরও অনেক ফল ও সবজির মতো ভারতে মরিচের শুভাগমন ঘটেছিল। ভাস্কো দা গামা এসেছিলেন দক্ষিণ ভারতের কাপ্পাডুর কালিকট বন্দরে। সেখানেই প্রথম মরিচের চল হয়েছিল। দক্ষিণাত্য থেকে পাণ্ডব বিবর্জিত বঙ্গদেশে মরিচ পৌঁছাতে সম্রাট শাহজাহানের বাদশাহির কাল লেগে গিয়েছিল। সেটি আনুমানিক সপ্তদশ শতক।

বঙ্গদেশে মরিচের জয়যাত্রা ঘটেছিল অতি দ্রুত। বোঝাই যাচ্ছে, বাঙালির রসনা তাকে স্বাগত জানাতে পরিপূর্ণ প্রস্তুত ছিল। তার স্পর্শ পেয়ে কেবল ধন্যই হয়নি, তাকে ছাড়া বাঙালির চলছে না। মিষ্টি যতই মিষ্টি হোক, মিষ্টি ছাড়া তবু চলে। কিন্তু ঝাল—নৈব নৈবচ। মৎস্যপ্রিয় বাঙালির লোক শ্লোকেও মরিচ–মাছের কথা উঠে এসেছে এভাবে—‘তুমি থাকো ডালে, আমি থাকি খালে/দুজনের দেখা হবে মরণের কালে।’

অবশ্য পাতে যদি মাছ, শাক না–ও থাকে, অভাবী বাঙালির জঠরের জ্বালা মেটাতে দুই মুঠো ভাতের সঙ্গে এক চিমটি লবণ, আর চাই একটি কাঁচা মরিচ। বাঙালির সেই অনিবার্য প্রয়োজনীয়তার সুযোগ নিয়েই যে কারসাজি করে কাঁচা মরিচের দাম গগনচুম্বী করে তোলা হয়েছে, তা কি মানুষ বোঝেনি!

মরিচের অন্যবিধ প্রয়োগ

মরিচের অন্যবিধ ব্যবহারও যথেষ্ট। অস্ত্র হিসেবেও রয়েছে এর ব্যবহার। অধুনা ‘হাতবোমা’ হিসেবে মরিচ ব্যবহৃত হচ্ছে। তা ছাড়া জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে মরিচের গুঁড়ার প্রয়োগ রয়েছে। পুলিশ ‘পিপার স্প্রে’ নামের একধরনের অস্ত্র প্রয়োগ করে রাজপথের মিছিল বা বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে থাকে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কেউ কেউ, কোনো ক্ষেত্রে নারীরা সঙ্গে পিপার স্প্রের বোতল রাখেন। নির্যাতন করতে মরিচগোলা পানিরও প্রচলন আছে।

মার্কিন মুলুকের অনেক অঞ্চলে কাঠবিড়ালির উপদ্রব ঠেকাতে চিনাবাদামের সঙ্গে উগান্ডায় উৎপাদিত ‘বার্ডস আই পিপার’ নামের একধরনের মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে ছড়িয়ে রাখা হয়।

অনেকে মনে করেন, অশুভ শক্তি তাড়ানোর ক্ষমতা আছে মরিচের। তারা বাড়ি বা দোকানপাটের দরজায়, এমনকি গাড়ির উইন্ডশিল্ডের সামনে মরিচ আর লেবু ঝুলিয়ে রাখেন। ভারতে এই দৃশ্য বেশ চোখে পড়ে। আবার ডাইনি তাড়াতে শুকনা মরিচ পুড়িয়ে ধোঁয়া দেওয়ার চলও ছিল বহু সমাজে।

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, মরিচের ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ আছে। বিশেষ করে প্রোস্টেট, ত্বক ও অন্ত্রের ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ বা ধ্বংস করতে পারে মরিচ। এ ছাড়া মরিচ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। মরিচ প্রসাধনী তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।

সেই মরিচ নিয়ে তেলেসমাতি দেখে নাগরিকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার অধিকাংশই মরিচের স্বাদের মতোই ঝাঁজালো। সেখানে একটি কবিতাও চোখে পড়ল। তার দুটি চরণ এ রকম—‘ঘরের কোণে মরিচগাছ, লাল মরিচ ধরে/তোমার কথা মনে হলে চোখের পানি পড়ে।’ প্রিয় বিরহে অশ্রুপাত প্রসিদ্ধ। তবে মরিচের যে দুর্মূল্য চলছে, তাতে শুকনা ভাতের সঙ্গে মরিচ জোটাতে না পেরে কারও চোখ যদি অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.